নতুন পোশাকে মসজিদ পুত্রজায়ার দিকে আসছে মানুষ। সবাই যে মালয়েশিয়ার নাগরিক, তা-ও নয়। ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ নানান দেশের নানান জাতের মানুষ আছেন সেই দলে। আছেন অনেক বাংলাদেশিও। বিদেশে থাকলেও তাঁদের মন পড়ে রয়েছে বাংলাদেশে। এই প্রবাসীরা জানান, তাঁদের কাছে ঈদ মানে বিদেশে বসে দেশের স্মৃতিচারণা।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেকে দেশের মতো মালয়েশিয়াও ঈদ উদ্যাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ঈদের সময় রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন ভবনে যেমন অনেক সাজসজ্জা দেখা যায়, এই দেশের রাস্তাঘাট দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এখানে সব কিছুই স্বাভাবিক।
সকালে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়া মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, হাজারো মানুষের ভিড়। প্রায় সবাই এসেছেন গাড়ি নিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে সবাই হাঁটছেন মসজিদের দিকে। বেশিরভাগ মানুষের পরনে উজ্জ্বল রঙের পোশাক। অনেকে আবার ঐতিহ্যের ধারক পোশাকে এসেছেন।
পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীও আসছেন এই মসজিদে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বড়দের পাশাপাশি অনেক ছোট্ শিশুও এসেছে। কেউ বাবা-মায়ের হাত ধরে রেখেছে, আবার কেউবা কোলে চড়ে বসেছে।
স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় নামাজ শুরু হলো। নামাজ শেষে কোলাকুলি। অনেকে ছবি তুলতে ব্যস্ত। সেলফি তোলার লোকেরও অভাব নেই। অনেক বাংলাদেশিকেও সেই দলে দেখা গেল। এঁদেরই একজন যশোরের মামুন হোসেন। তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে মালয়েশিয়া আছেন। পাঁচ বছর ধরেই ঈদ এখানে কাটছে। ঈদের দিন সারাটা দিন তিনি বাংলাদেশে পালন করে আসা ঈদের স্মৃতিচারণ করেন। তাঁকে সমর্থন জানালেন, রাজা হোসেন ও শফিকুল ইসলাম। তিনজন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে এসেছেন।
ঝিনাইদহের আবির আহমেদ বলেন, ২২ দিন আগে তিনি মালয়েশিয়া এসেছেন। ঈদের দিনটায় দেশের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।
দুই ভাই মামুন মিয়া ও রাজিব মিয়া বলেন, বিদেশে ঈদ করতে ভালো লাগে না। কিন্তু কিছুই করার নেই। দেশে ঈদ করতে যাওয়ার যে খরচ, তা তাঁদের নেই। কাজেই ঈদে বিদেশেই কাটাতে হয়।
সাধারণ শ্রমিক হিসেবে যাঁরা মালয়েশিয়ায় কাজ করেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই এই দশা। তাঁরা সাত-আট বছর পর একবার দেশে ফিরতে পারেন। বাকি সময় বিদেশেই কাটে। আর যাঁরা অবৈধ বাংলাদেশি, তাঁরা তো দেশে ফেরার কথা ভাবতেই পারেন না।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশের নতুন এই মসজিদে অনেক বাংলাদেশিই শখ করে নামাজ আদায় করতে আসেন। এ ছাড়া মারদেকার কাছে জাতীয় মসজিদেও অনেক বাংলাদেশি নামাজ আদায় করেন। মারদেকা মাঠে অবশ্য ‘সালামত হরি রায়া’ লেখাটি চোখে পড়ল। মালয়েশিয়ায় রায়া মানে ঈদ।
মারদেকার পাশেই কোতারিয়া যা মালয়েশিয়ার বাঙালি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানকার দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বাংলাদেশিদের নিয়ন্ত্রণে। গত বছর এখানকার রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়ার অনুমতি পাওয়ায় বাংলাদেশিরা এখানেই জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তবে এবার সেই অনুমতি মেলেনি। কাজেই বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় নামাজ আদায় করতে গেছেন।
কোতারিয়ার বাঙালি রেস্তোরাঁগুলোতে ঈদ উপলক্ষে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যাবে বলে জানান এগুলোর মালিক। অবশ্য অনেক বাংলাদেশিই জানিয়েছেন, যেহেতু ঈদ উপলক্ষে ছুটি আছে, কাজেই তাঁরা আজ নিজেরাই ভালো-মন্দ রান্না করে খাবেন। অনেকে জানালেন, তাঁরা ঘুমিয়েই ঈদের দিন কাটিয়ে দেবেন।
কুয়ালালামপুরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যখন ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন রাওয়াংয়ের একটি আসবাবপত্র কারখানার বাংলাদেশিদের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। ফরিদপুরের রেজাউল করিম বললেন, টি কে ফার্নিচার কোম্পানিতে ৬০ থেকে ৭০ জন বাংলাদেশি চাকরি করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ইফতারের পর কারখানায় আগুন লেগে শ্রমিকদের থাকার ঘরগুলো পুড়ে গেছে। রাত থেকে তাঁরা বাইরে আছেন। ঈদের চেয়ে এখন তাঁদের বড় দুশ্চিন্তা ভবিষ্যৎ নিয়ে।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শ্রম কাউন্সেলর সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে বসে কারওই ঈদ করতে ভালো লাগে না। এ কারণে অনেকেই ঈদের সময় দেশে চলে যান। তবে একটা বড় অংশই বিদেশে ঈদ কাটান।’
প্রবাসী সব বাংলাদেশি মিলেমিশে সানন্দে এই দিনটি উদ্যাপন করবেন বলে তিনি আশা করছেন।
সৌজন্যে- প্রথম আলো