বছর ঘুড়ে আবার এল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। শান্তি, সৌহার্দ্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে মুসলিমদের বড় এই উৎসব। ঈদ হচ্ছে সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন। ধনী-দরিদ্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব মুসলমান মিলেমিশে ঈদের আনন্দ সমান ভাবে ভাগ করে নেন, পারিবারিক হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ভুলে খুশি মনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদূড় করেন। রোজা ও ঈদে ধর্মীয় অনুভূতি ও উৎসবের আমেজ দু’য়ে মিলে আনন্দ দ্বিগুন হয়ে ওঠে সবার। ছোট বেলার ঈদের আনন্দ অন্য রকম ছিল। সবচেয়ে বেশি আনন্দ ছিল ঈদের দিন সকালে নতুন জামা-কাপড় পড়ে ঈদের সালামি কিংবা ঈদি সংগ্রহ করা।
কালে কালে সেলামি দেওয়ার পন্থায় বৈচিত্র্য এসেছে এটা ঠিকই অনুমেয়। তার সাথে সাথে সেলামীর ধরনেও এসেছে পরির্বতন । বড়দের সাথে ছোটদের এই ভালোবাসার লেনদেন সম্পর্ককে করে তুলতো আরও মধুর। ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা সবাই কেউই এই সেলামি থেকে বাদ যায় না। টাকার অংকে যাই হোক, সেলামি দিতে হবে, নিতে হবে। এটা যেন চিরায়িত সংস্কৃতির ঐতিহ্য এর অংশ হয়ে গেছে।
ঈদের দিন কেউ পা ছুঁয়ে সালাম করলে স্নেহ নিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে দুই টাকা কিংবা পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে দিতেন। সেলামকারীর বয়স একটু বেশি হলে মাঝে মধ্যে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মিলে যেত। নতুন পোষাক পরে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে তারপরই ঈদের সালামি নেয়ার প্রথা চলে আসছে বহুবছর ধরে।
এখন অবশ্য সেভাবে সালাম করার প্রথা এক হিসেবে বিলুপ্তির পথে। কেউ আর এখন আগের মত বড়দের সালাম করে না, কিন্তু সেলামি ঠিকই চায়। পাশাপাশি সেলামি দেওয়ার নিয়মটাও গেছে পাল্টে। এখন সেলামি দেওয়া হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা মোবাইল রিচার্জ মাধ্যমে। এমনকি সেলামিদাতা এবং সেলামি গ্রহীতার সামনাসামনি আসারও প্রয়োজন পড়ে না।
ঈদের দিনের মত সুন্দর ও আনন্দময় হোক আমাদের প্রতিটি দিন। হাসি-খুশিতে ভরে উঠুক সবার জীবন। প্রযুক্তি ঠিকই আমাদের বেগ কমিয়েছে তার জন্য আমাদের সুন্দর ভালবাসাময় আবেগটা যেন সে নষ্ট করতে না পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে। (প্রতিক্ষণ)