মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে আনিত পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগে তার ফাঁসি, ৪ নম্বরে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বাকী দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
আদালতে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল এবং ফোরকান মল্লিকের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম খান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ফোরকান মল্লিকের স্ত্রী ও তার বড় ছেলে জহির মল্লিক ট্রাইব্যুনালে ছিলেন।
এর আগে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ফোরকান মল্লিককে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশি প্রহরায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।
গত ১৪ জুন মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন রায়সহ রাষ্ট্রপক্ষের ১৪ জন সাক্ষী। অন্যদিকে ২৬ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন চারজন সাফাই সাক্ষী।
২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। বিপক্ষে শুনানি করেন ফোরকান মল্লিকের আইনজীবী আবদুস সালাম খান।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৭ নভেম্বর এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। পরে তিনি অভিযোগ আমলে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। ২৮ অক্টোবর এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হয়।গত বছরের ২৬ জুন শুরু করে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়।
ফোরকানের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছইলাবুনিয়া গ্রামে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত বছরের ২৫ জুন সকালে পটুয়াখালী গোয়েন্দা শাখার একটি দল বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফোরকান মল্লিককে গ্রেফতার করে।