পরনে বালুমাখা ময়লা একটা লুঙ্গি আর সাদা লম্বা পাঞ্জাবি। মাথায় বাবরি চুল, মুখে দাড়ি। চোখে মুখে ক্ষুধার ক্ষিপ্রতা। ছোটখাটো গড়নের এই লোকটি বালু খেকো। নাম তার আবদুল্লাহ। অন্য খাবার খান না, তা নয়। তবে কাছে যদি খাবার না থাকে, তখন বালুই তার কাছে অমৃত! ক্ষুধা পেলে বালুর স্তূপে বসে অবলীলায় বালু খেয়ে যান তিনি।
মানুষের খাদ্য তালিকায় বালুর নাম নেই। অথচ আবদুল্লাহর দাবি, এই জিনিসটাই খেয়ে দিনের পর দিন বেঁচে থাকতে পারেন তিনি। গত কদিন ধরেই বালু খেকো আবদুল্লাহকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের কাছে তিনি ইতিমধ্যেই ‘বালু বাবা’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আবদুল্লাহকে বালু খেতে দেখা গেল পজেলা সদরের রামনগর এলাকার একটি বালুর স্তূপে। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় সেখানেই।
বালু কেন খান- জানতে চাইতেই পাঞ্জাবির পকেট থেকে দুই টাকার একটি কয়েন বের করে দেখিয়ে বললেন, ‘এটার জন্য। পয়সার অভাবেই বালু খাওয়া শেখা।’ আবদুল্লাহর ভাষ্যমতে, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি গৃহহীন।
২০ বছর বয়সে তিনি ঘর ছাড়েন। বছরের বেশিরভাগ সময় থাকেন ভারতের আজমির শরিফে। জন্মস্থান মুর্শিদাবাদ। আজমির শরিফে থাকতে শুরু করে আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়তে হয় তাকে। দয়া করে কেউ দুই-চারটা টাকা দান করলে তা দিয়েই জুটত তিন বেলা খাবার। কিন্তু এভাবে কত দিন?
একদিন টাকার অভাবে কোনো খাবার কিনতে পারেন নি আবদুল্লাহ। ওই দিন তাকে কেউ খাবারও দেননি। পাশেই পড়ে ছিল নির্মাণাধীন ভবনের বালুর স্তূপ। তখন পেটের যন্ত্রণায় প্রায় পাগল আবদুল্লাহ মুঠো মুঠো বালু খেতে শুরু করেন। সে প্রায় দু’দশক আগের কথা। তখন থেকেই বালু খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এখন ক্ষুধা পেলেই খাওয়া হয় বালু! খাবার নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই তার।
কৌতূহলীরা এ মানুষটির বালু খাওয়া দেখে অবাক হন। কেউ কেউ টাকাপয়সাও দিয়ে থাকেন। এটাই তার আয়ের উৎস। কৌতূহলীদের কেউ কেউ তার পেটে হাত দিয়ে দেখেন। বালুর ঘস ঘসে শব্দ পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ একটু ভাবুক ধরনের। কথাও বলেন একটু কম।
আবদুল্লাহর দাবি, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি বালু খেলেও এখনো পর্যন্ত তার পেটে কোনো সমস্যা হয়নি। জানালেন, তিনি বিয়ে করেননি। মাথা গোঁজার মতো তার স্থায়ী কোনো ঠিকানাও নেই। রাতে ঘুমান বাজারে দোকানের বারান্দায় কিংবা ফুটপাতে। যখন যেদিক মন চায়, তখন সে দিকে রওনা দেন তিনি। মাঝে মাঝে আশ্রয় নেন পীর-মুর্শিদের দরগায় অথবা মাজারে। এক মাস আগে ভারত থেকে এসেছেন বাংলাদেশে। তবে কবে আবার ফিরবেন, তা তিনি জানেন না।