Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Khaleda-Jobeidaবিএনপির রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ আঁকতে যাচ্ছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলকে বাঁচাতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ঘিরেই খালেদা জিয়ার এই সমীকরণ।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পরবর্তী নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন না বলে বক্তব্য দেওয়ার পর নতুন করে এই পরিকল্পনার কথা ভাবছেন বেগম জিয়া। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আপাতত জোবাইদাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করবেন তিনি।

chardike-ad

৫ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে থাকা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা জানান, জোবায়দা রহমানকে নিয়ে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অনেক আগে থেকেই চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন।

জানা গেছে, রমজানে সৌদি আরবে ওমরা পালনের সময় তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদার সঙ্গে মিলিত হবেন খালেদা জিয়া। তখনই অনেক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। পরবর্তীতে সরকার বিএনপিকে যাতে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে তাই খালেদা জিয়া এই নয়া পরিকল্পনা করেছেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মতো মধ্যবর্তী নির্বাচনেও বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিএনপিকে বিভক্ত ও শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ফন্দি আটছেন ক্ষমতাসীনরা। এজন্য বাড়তি সতর্কতা থাকলেও আতঙ্কিত নয় বিএনপির নীতি নির্ধারকরা।

দীর্ঘ আন্দোলনে ব্যর্থতা, বর্তমান বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না এমন প্রচারণা, শীর্ষ নেতাদের সাজা হওয়ার আশঙ্কা, শীর্ষ কয়েক নেতার ফোনালাপ ফাঁসসহ বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি দলের ভাঙনের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে। এরপরই শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে আলোচনা করেন হাইকমান্ডের সঙ্গে। তবে এই ইস্যুতে তারা উদ্বেগের কোনো ছাপ দেখেননি বিএনপি চেয়ারপারসনের চেহারায়।

এদিকে নতুন করে অাবারো বিএনপিতে ভাঙনের সুর উঠেছে। তবে দলটির সিনিয়র নেতাদের মতে, ভাঙন নিয়ে চিন্তিত নন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে তার আগাম পরিকল্পনা প্রস্তুত করা আছে। এখন দলকে সংগঠিত করার বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য আগামী বছর সুবিধাজনক সময়কে বেছে নিতে পারে সরকার। এই সময়ের আগেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়ে পড়লে বিএনপি আরো চাপে পড়বে।

ওই অবস্থায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হবেন না। আর সিনিয়র নেতারা মামলায় এমনভাবে জর্জরিত যে, তাদের কারো পক্ষে দলকে সংগঠিত রাখা সম্ভব হবে না।

সূত্র মতে, গত আড়াই বছরে সহিংসতার অভিযোগে সারাদেশে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীর নামে ১৫ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত পাঁচ মাসে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির এক হাজার ১০০ নেতাকর্মীর নামে শতাধিক আইনে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অন্যান্য আইনের মামলায় কমপক্ষে সাড়ে ৬০০ চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে।

বিএনপির আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৩, তারেক রহমান ৭৬, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৭৮, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১০, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ ৮, রফিকুল ইসলাম মিয়া ৫, এমকে আনোয়ার ৫, মির্জা আব্বাস ৭৩, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১১, বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান ৫, শমসের মবিন চৌধুরীর ৪, সেলিমা রহমান ১০, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ৫, মোসাদ্দেক আলী ফালু ৪, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ৮৭, বরকতউল্লা বুলু ৫০, সালাহউদ্দিন আহমেদ ২৭, রুহুল কবীর রিজভী ৪৪টি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ৪০, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ১১০, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ১৭৮, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১০০, সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু ১০৫, ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম ৩৮, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ১০১টি ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবের বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় বিচার প্রক্রিয়া যতই এগোবে ততই বিএনপি বেকাদায় পড়তে থাকবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হতে পারে, এমন ধারণা থেকে পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করেছেন খালেদা। তাদের অনুপস্থিতিতে দলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য নেতৃত্ব গ্রহণে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এজন্যই সৌদি আরবে যাচ্ছেন জোবাইদা রহমানও। সেখানে এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে তাদের মধ্যে।

বিএনপি সূত্র মতে, মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত কিংবা কারান্তরীণ হলে বিএনপির ঐক্য ধরে রাখতে তুরুপের তাস হিসেবে মেধাবী চিকিৎসক জোবাইদার রাজনীতিতে দ্রুত অভিষেক ঘটবে। সে ধরনের প্রস্তুতিই নিতে বলা হয়েছে তাকে। দলের দুঃসময় ও রাজনৈতিক সংকটময় এ পরিস্থিতিতে অনেক চিন্তা ভাবনা করে জোবাইদা রহমানের ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, ভাঙন নিয়ে তারা এখনো খুব একটা ভাবছেন না। কারণ, এ পর্যন্ত দলের প্রভাবশালী অনেক নেতাই দল ছেড়ে গিয়ে সুবিধা করতে পারেনি। ১/১১ প্রেক্ষাপটে মান্নান ভুঁইয়ার নেতৃত্বে দলের একটি বিশাল অংশ খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করেও শেষ পর্যন্ত দল থেকে নিজেরাই মাইনাস হয়েছেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ভাঙন নিয়ে দলে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এ নিয়ে ভাবনারও কিছু নেই। কারণ এ পর্যন্ত ভাঙনের সব ষড়যন্ত্র তিনি সামনে থেকে দেখেছেন। যতবার দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, তা সফলতার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিহত করেছেন।

তিনি বলেন, ভাঙন মোকাবেলার অভিজ্ঞতা খালেদা জিয়ার অনেক বেশি। এজন্য এ নিয়ে ভাবনার কিছুই নেই।

সূত্রঃ জাগো নিউজ