Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

mayaদুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কেবল সংসদ সদস্য পদ ও মন্ত্রিত্ব-ই নয়, এবার দলীয় পদও হারাচ্ছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় দলীয় চাপের মুখে পড়েন মায়া চৌধুরী। সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিত অনুলিপি বুধবার প্রকাশ হওয়ার পর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়কমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ওপর দলীয় চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এতে করে দলের পদ হারাতে পারেন তিনি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আমরা আদালতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি। আদালত যে রায় দেয়, তা আমরা বরারই মেনে আসছি। আদালতের মূল রায় হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আদালতের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

chardike-ad

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে ১৩ বছররে কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসনে চৌধুরী ওই রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালরে ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দুর্নীতির মামলা থেকে তাকে রেহাই দেন। পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় দুদক।

১৪ জুন আপিল বিভাগ মায়ার খালাস আদেশ বাতিল রায় ঘোষণা করেন। বুধবার রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হয়। আদালতের রায় ঘোষণা পর থেকেই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সংসদ সদসদ্যের পদ এবং মন্ত্রিত্ব অবৈধ হয়ে গেছে।

এদিকে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই দাপুটে নেতা। মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্যের পদের পাশাপাশি দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের জন্ম দেয়া মায়াকে।

সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখার অভিযোগ ওঠে মায়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে। নিজের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকা রাখেন বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ তোলেন।

ওই সময় দফায় দফায় বৈঠক করেও কেন্দ্র সঙ্কটের সমাধান দিতে পারেনি। গত ২৯ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্যান্য নেতারা নালিশ করতে গেলে, অভিযোগের সব বিষয়ই অবগত আছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনাতেও দলের চাপ এবং সমালোচনার মুখে পড়েন মায়া। মায়ার মেয়ের জামাই র‌্যাব কমান্ডার লে. কর্নেল তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে ওই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার সম্পৃক্ততায় মায়ার ছেলে দীপু চৌধুরীর নামও উঠে আসে।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের পর মায়া চৌধুরী দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করলেও পরে দল মুখ ফিরিয়ে নেয়। ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের অগ্রগতিও হয়েছে বেশ, আর তাতে মায়ার জামাতা র্যাব কমান্ডার লে. কর্নেল তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে দলের মধ্যে মায়ার দাপট অনেকটাই কমে আসে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নিজের কব্জায় রেখে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন মায়া, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহনগর কমিটি গঠন করা হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে।

কিন্তু আড়াই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি এমএ আজিজ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। অভিযোগ রয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে একক নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মায়া চৌধুরী-ই কমিটির পূর্ণাঙ্গতা দেননি।

আদালতের রায়ের পর এবার দলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন মায়া। হারাতে পারেন দলীয় পদও। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফের সঙ্গে বিষয়টিতে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলছি না। আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দলীয় সংবিধান অনুযায়ীই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সৌজন্যেঃ জাগো নিউজক