জার্মানীতে শীর্ষস্থানীয় মুসলমান অ্যাথলটদের কাছে রমজানের গুরুত্ব আলাদা৷
গেলসেনকিয়ের্শেন মাঠে ফুটবল চর্চা করছেন সুলায়মান বায়সাল৷ রমজান মাসেও ফুটবল অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি৷
আরো অনেক মুসলমানের মতো ২১ বছর বয়সী ইংরেজি এবং দর্শনের ছাত্র বায়সাল ইসলামের পবিত্র মাস রমজানে রোজা রাখছেন৷
ডয়চে ভেলেকে বায়সাল বলেন, ‘‘(প্রাকটিসের সময়) প্রায়ই আমি একই ধরনের প্রশ্ন শুনি, তোমার কি কোনো পানীয়ের প্রয়োজন হয় না? তুমি কিভাবে না খেয়ে থাকো? আমার কাছে এ সব প্রশ্নের উত্তর একটাই, আমার এই মুহূর্তে কিছু পান করার দরকার নেই, সত্যিই নেই৷”
জার্মানিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় চার মিলিয়ন৷ এই দেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ মুসলমান৷ সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের ৯৪ শতাংশই রোজা পালন করেন৷ বায়সাল গত দশ বছর ধরেই রোজা রাখছেন৷ বলা বাহুল্য, অ্যাথলেটদের রোজা রাখতে গেলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়৷
প্রফেশনালরা প্রেরণা
জার্মান সময় রাত ৯টার দিকে ইফতার করেন বায়সাল এবং তার পরিবার৷ এরপর ভোর ৩টায় সেহরি করেন তারা৷ এ সময় এক লিটারের মতো পানি পান করেন বায়সাল৷
তার দল ‘ইয়েগ হাসেল’-এর অর্ধেক সদস্যই রোজা রাখে৷ বায়সাল নয়-দশ বছর বয়সী খুদে ফুটবলারদের কোচ৷ বায়সালের রোজা পালনের বিষয়টিকে এই দলের সদস্যরা সম্মান করে৷
বায়সাল জানেন, আমি যাতে দেখতে না পাই, সেজন্য আমার দলের খেলোয়াড়রা তাদের পানির বোতল লুকিয়ে রাখে৷ আমি তাদের বলি, ‘‘তোমাদের এটা করার দরকার নেই৷ বরং আমার সামনেই পানি পান করতে পারো৷ কিন্তু তারা আমার সম্মানে সেটা করে না৷”
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ডিএফবি, জার্মান ফুটবল লিগ ডিএফএল এবং সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমস ২০১০ সালে যৌথভাবে জানিয়েছে, রমজান মাসে প্রফেশনাল ফুটবলাররা রোজা রাখা থেকে বিরত থাকতে পারেন৷ তবে এই সুযোগ সত্ত্বেও অল্প কিছু খেলোয়াড় রোজা রাখেন৷ আর এসব খেলোয়াড়রা – যেমন বায়ার্ন মিউনিখের ফ্রাংক রিবেরি, যিনি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন – বায়সালকে প্রেরণা যোগান
বায়সাল বলেন, ‘‘এই খেলোয়াড়রা সেরা লিগের এবং সেরা ক্লাবের খেলোয়াড়, তারা অনেক টাকা আয় করেন, অন্যান্য প্রফেশনাল খেলোয়াড়রা যা করেন তারাও তাই করেন এবং এত সবের পরও তারা রোজা পালন করেন৷ তারাই আমার উৎসাহ৷”
বিশেষায়িত পরিকল্পনা
ডুইসবুর্গ-ওয়ালসুম-এর উয়িং স্যুন মার্শাল আর্ট স্টুডিওতে শরীর চর্চা করছেন ওগুজহান বাতার৷ স্টুডিওটির মালিক তার বাবা৷ ২৩ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট স্টুডিওর সদস্যদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখান৷
বাতারের স্টুডিওর অর্ধেকের মতো সদস্য রোজা রাখেন৷ তাদের জন্য ব্যায়ামের একটি বিশেষ পরিকল্পনা করেছেন তিনি৷ এই ব্যায়ামে শারীরিক শ্রমের চেয়ে কৌশল থাকে বেশি৷ ফলে রোজা রাখা অবস্থায় চর্চা সহজ হয়৷
বায়সাল রোজার পুরো সময়টাকেই প্রার্থনা মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রোজা হচ্ছে এক ধরনের প্রার্থনা৷ আর আপনি সেটা ১৫-১৬ ঘণ্টা ধরে করছেন৷ যার অর্থ হচ্ছে, আপনি আল্লাহর সাথে ১৫-১৬ ঘণ্টা যুক্ত থাকছেন৷”