বেশ কয়েক বছর ধরে লাল এবং হলুদ বর্ণের ফল ও সবজি আকর্ষনীয় করার জন্য এবং কাঁচা বা অর্ধ পাকা ফলকে পাকা দেখানোর জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কাপড় রঙ্গীন করার জন্য ব্যবহৃত কৃত্রিম রং বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহার করছে। এ সকল রং মানব দেহের জন্য বিষাক্ত যা ক্যান্সার, কিডনী বিকল, অর্টিজম, খাদ্য বিষক্রিয়া, ডায়রিয়া, বমিসহ নানা প্রাণঘাতি রোগ সৃষ্টি করে যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দেয়। সাধারণ ক্রেতারা বাজারের এসব কৃত্রিম রং দেওয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত ফল সনাক্ত করতে পারে না। সহজলভ্য সনাক্তকরন প্রযুক্তির অভাবে জনগনের আক্ষেপ করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
গত বছর কুষ্টিয়া জেলায় বিষাক্ত তরমুজ খেয়ে ২ টি শিশু এবং কয়েকবছর আগে দিনাজপুরে লিচু খেয়ে ১৩ শিশু অকালে মৃত্যু বরন করে। তখন থেকে এ বিষয়ে গবেষণাটি শুরু করে এবং এ সপ্তাহে কম মূল্যের সহজে ব্যবহার উপযোগী এবং নিরাপদ একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজী বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন। এর আগে তিনি মাটির রস পরীক্ষার যন্ত্র, পেট্রোল বোমা প্রতিরোধী প্রযুক্তিসহ অনেক উপকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
বিজ্ঞানী মো. ফারুক জানান, এ কিট ব্যবহার করে ক্যরোটিনয়েড ও লাইকোপিন পিগমেন্ট সমৃদ্ধ লাল এবং হলুদ বর্ণের ফল এবং সবজিতে কৃত্রিম রং ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তাৎক্ষনিক জানা যাবে। তরমুজ, টমেটো, চেরী এবং গাজর এর ক্ষেত্রে এ কিট ব্যবহার করে সঠিক ভাবে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং এর উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব।
কিটের ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্ভাবক মো. ফারুক জানান, তরমুজ, টমেটো, চেরী বা গাজর থেতলে তার ৫ মিলি. পরিমান রস চামচ বা কাচের টিউবে নিয়ে ২ ফোঁটা দ্রবন দিয়ে হালকা ঝাকালে বর্ণ পরিবর্তন হয়ে গাঢ় সবুজ হলে নিরাপদ এবং বর্ণ বেগুনী, পিংক বা অন্য যে কোন রং হলে অনিরাপদ। বেগুনী, পিংক বা অন্য যে কোন রং ধারণ করলে ফলে ক্ষতিকর কৃত্রিম রং ব্যবহারের প্রমান পাওয়া যাবে। ব্যবহৃত কৃত্রিম রং এর মান, পরিমান এবং রকম ভেদে বিভিন্ন বর্ণ ধারন করবে।
উদ্ভবিত দ্রবনটি ক্যরোটিনয়েড ও লাইকোপিন পিগমেন্ট এর সাথে বিক্রিয়া করে গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারন করে। দ্রবনটি সাধারনত কৃত্তিম রং এর সাথে বিক্রিয়া করে না বা করলেও সবুজ ব্যতীত অন্যান্য বর্ণ ধারন করে।
প্রতিটি টেষ্টের জন্য খরচ হবে ২ থেকে ৩ টাকা মাত্র। ব্যবহারকালীন ব্যবহারকারীর হাতে বা শরীরে পরলে কোন রকম ক্ষতি হবে না কারণ এটি সম্পূর্ণরুপে এসিড মুক্ত, এটিতে প্রচলিত অন্যান্য কিটের মত অতি ঘন মাত্রায় এসিড ব্যবহার করা হয়নি।
কম খরচের কার্যকরী এই কিটটি জনসাধারনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যবহার করলে সহজেই ফল এবং সবজিতে ক্ষতিকর কৃত্তিম রং ব্যবহারকারী অসাধু ব্যবসায়ী এবং ক্ষতিকর ফল এবং সবজি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে ফল এবং সবজিতে কৃত্তিম রং ব্যবহার জনিত কারনে শিশু মৃত্যুসহ দীর্ঘ মেয়াদী অনেক রোগব্যাধি কমিয়ে আনা সম্ভব।
তিনি আশা করেন, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এই কিটটি দ্রুত জনগনের কাছে সহজলভ্য করাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মাধ্যমে সহজলভ্য করা ও সাধারণের মাঝে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত