Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

noboborsoআজ পয়লা বৈশাখ। ১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষ আজ একাত্মা হয়ে গাইবে- এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ…। আনন্দে উল্লাসে মাতবে গোটা দেশ। আজ বাঙালীর চিরন্তন ঐতিহ্যের উৎসব আনন্দে অবগাহন করার দিন।

কবিগুরুর ভাষায়- নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে/ শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে…। একই আনন্দের প্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লেখেন- তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর…।

chardike-ad

ধুলো পড়া অতীত পেছনে ফেলে আজ নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বাঙালি। নতুন স্বপ্ন বুনবে বাংলার কৃষক। নতুন হালখাতা খুলবে ব্যবসায়ীরা। নববর্ষ বরণে রাজধানীসহ সারাদেশ একযোগে চলবে লোকজ ঐতিহ্যের নানা উৎসব অনুষ্ঠান।

সরকারি ছুটির দিন আজ। আজ শুধু উৎসব নয়, নতুন করে জেগে ওঠার দিন। সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথ নেওয়ার দিন।

তবে বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সন প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তার আমলেই প্রবর্তন হয় বাংলা সন। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। বৈশাখ নামটি নেওয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো আচার অনুষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন আয়োজন।

গ্রামীণ জীবনে পয়লা বৈশাখ খুবই গুরুত্ববহ। নববর্ষ উপলক্ষে ইতিমধ্যে গ্রামের মানুষ বাড়িঘর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করেছেন। আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে পুরনো রীতি অনুযায়ী অনেকেই নতুন জামাকাপড় পড়বেন। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশিদের বাড়িতে বেড়াতে যাবেন। ঘরে ঘরে বিশেষ খাবার রান্না করা হবে। থাকবে পিঠা পুলির আয়োজন। আজ বিভিন্ন গ্রামে বসবে বৈশাখী মেলা। এতে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, খেলনা, মিষ্টি, দই ইত্যাদি বিক্রি হবে। বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করা হবে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তির মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার।

আজ রাজধানীর সব পথ মিলবে রমনা বটমূলে। বহু বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও রাজধানীর রমনা বটমূলে আয়োজন করা হবে বর্ষবরণ উৎসবের। ষাটের দশকে বাঙালি চেতনার উন্মেষের কালে পাকিস্তানি মূর্খদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রথমবারের মতো অসাম্প্রদায়িক এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এখন এটি পয়লা বৈশাখের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে ভোর সোয়া ৬টায় শুরু হবে ছায়ানটের অনুষ্ঠান। পয়লা বৈশাখ ভোর সোয়া ছয়টায় যন্ত্রসঙ্গীতে ভোরের আলাপ তুলে শুরু হবে বৈশাখ আবাহন।

মঙ্গল শোভাযাত্রা: বর্ষবরণের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে এবারও পয়লা বৈশাখ সকালে এই শোভাযাত্রা বের করা হবে। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুণরায় এটি চারুকলায় এসে শেষ হবে। এতে গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলার প্রস্তুতি নিয়েছেন আয়োজক চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন সকল শ্রেণি পেশার, বয়স, বর্ণের মানুষ।

চাই পান্তা-ইলিশ: কেউ কেউ বলেন বটে- পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের খুব সম্পর্ক নেই; ছিল না। কিন্তু তাতে কী? রাজধানী শহরে পহেলা বৈশাখ মানেই যেন পান্তা-ইলিশ। শুঁটকি ভর্তা, আচার ইত্যাদি দিয়ে মজা করে খাওয়া হবে আজ। ঘরে, বিভিন্ন মেলায়, উৎসবে আয়োজন থাকবে পান্তা-ইলিশ। তবে দাম বেশি, অগ্নিমূল্য।

শুভ হালখাতা: চৈত্রের শেষ দিনে রোববার ব্যবসায়ীরা পুরনো বছরের বিকিকিনির সব হিসাবনিকাশ চুকিয়ে দিয়েছেন। আজ পয়লা বৈশাখে তারা হালখাতা খুলবেন। নবোদ্যমে শুরু করবেন ব্যবসা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঢাকায় এখনও হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে স্বর্ণকার ও কাপড় ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের আগে থেকেই গ্রিটিংস কার্ডের মাধ্যমে বা সরাসরি নিমন্ত্রণ জানান।