‘আল্লাহর কৃপায় দেশের কোটি টাকার সম্পদের সঙ্গে শত যাত্রীর প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছি, এটিই আমার জীবনের বড় পাওয়া। মানুষের সেবাতেই নাকি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।’ এ সব কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী পশ্চিম জোন বাণিজ্য বিভাগ রাজবাড়ীতে কর্মরত টিটিই (ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক) মো. আনোয়ার হোসেন (৬০)।
সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার জোরে রবিবার রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে উল্টোদিকে ২৬ কিলোমিটার চলে যাওয়া চালকবিহীন আন্তঃনগর ট্রেনটি (রাজবাড়ী-ফরিদপুর ৭৮৩) থামিয়ে শতাধিক যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। খবর দ্য রিপোর্ট।
নিজের জীবন বাজি রাখা এ মানুষটির নাম মো. আনোয়ার হোসেন। যাকে রেল বিভাগের সবাই আনোয়ার টিটিই বলেই চেনেন। মো. আনোয়ার জেলা শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার ২নং বেড়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।
চালকবিহীন ২৬ কিলোমিটার উল্টোদিকে ট্রেন চলার এ অভূতপূর্ব ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দেশের কোটি টাকার সম্পদ রেলওয়ের ১টি ইঞ্জিন ও ৬টি বগিসহ শত যাত্রীর প্রাণ রক্ষাকারী আনোয়ার টিটিই জানান, তিনি রেলওয়ে পাকশী বাণিজ্য বিভাগে টিটিই হিসেবে রাজবাড়ীতে কর্মরত। তিনি চাকরি জীবনে ৩৭ বছর একটানা দাযিত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আবার দুই বছরের চুক্তিভিত্তিতে চাকরিতে যোগদান করেন।
আনোয়ার টিটিই বলেন, ‘সকাল ৮টায় আন্তঃনগর ট্রেন এক্সপ্রেসে (৭৮৩) দায়িত্ব পালনে গাড়িতে উঠি। সকাল ৭টা ৫৭ মিনিটে হঠাৎ রেকটি (ইঞ্জিন ও বগিসহ সম্পূর্ণ গাড়ি) উল্টোদিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে চলতে থাকে। প্রথমে ভেবেছিলাম গাড়িটি হয়ত লাইন পরিবর্তন হচ্ছে। আউটার সিগন্যাল পার হয়ে দ্রুতগতিতে চলতে থাকলে সন্দেহ হয়। তখন বুঝতে পারি গাড়ি ভুল পথে চলছে। থামানোর জন্য চালক বা গার্ডকে খুঁজে পাইনি। এ সময় যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন। শিকল টেনে ও ভ্যাকুয়াম (বাতাস) ছেড়ে দিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করি।
প্রথমে দুই বগির ভ্যাকুয়াম খোলার পরও ট্রেনটির গতিরোধ হয়নি। তার পর তৃতীয় বগির পাওয়ার কারের করিডোর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখে ইট দিয়ে ভেঙে ফেলি। পরে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বগির ভ্যাকুয়াম খুলে দিই। এভাবে পাংশার বাবুপারা ব্রিজের কাছে গাড়িটি থামাতে সক্ষম হই। চাকরি জীবনের ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি এই কাজ করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে আল্লাহর মেহেরবানিতে এ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহর দরবারে তাই লাখো শুকরিয়া আদায় করছি। প্রাণে বেঁচে সাধারণ যাত্রীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন।