Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Ilsha

রুহুল খান, ভ্যানকুভার (কানাডা) থেকে

chardike-ad

বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইলিশ মাছ। কানাডার অধিকাংশ বাংলাদেশি দোকানগুলোতে সারা বছরই ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ছোট আকৃতির একটি ইলিশের দাম সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কানাডিয়ান ডলার। আর বড় একটি ইলিশের দাম পড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ কানাডিয়ান ডলার। তার মানে, বাংলাদেশি টাকায় বড় একটি ইলিশের দাম পড়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। কানাডার মানুষের আয়ের সঙ্গে তুলনা করলে এটা তেমন একটা দাম নয়।

কানাডার বাংলাদেশি দোকানের ইলিশগুলো সত্যি বেশ টাটকা আর অনেক বড় আকৃতির। কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের যেকোনো পার্টিতে ইলিশের খুব কদর। কানাডার বাংলাদেশি ভাইয়েরা যেমন ইলিশ মাছ কিনে গর্ব অনুভব করেন, তেমনি ভাবিরা ইলিশ মাছ রান্না করে এবং ভাইদের ইলিশের পেটি খাইয়ে বেশ আনন্দিত হন।

জানা যায়, একজন স্কটিশ বিজ্ঞানী হ্যামিলটন ইলিশ মাছ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেন এবং ১৮২২ সালে এই মাছের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেন। পদ্মার ইলিশগুলো চকচকে রুপালি, পিঠের ওপর হালকা সবুজ, পাখা ও লেজ একটু লম্বা। পদ্মার ইলিশের স্বাদই আলাদা, এক কথায় অমৃত। পৃথিবীতে প্রতিবছর কয়েক লাখ টন ইলিশ ধরা হয়ে থাকে, যার ৬০ শতাংশই বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, চীন ও আরব সাগরের তীরের দেশগুলোতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তবে মজার কথা হলো, আমাদের ইলিশ মাছই খেতে সবচেয়ে সুস্বাদু। আর তাই তো ইলিশ মাছ পেয়েছে জাতীয় মাছের মর্যাদা একমাত্র বাংলাদেশের কাছ থেকে। একটু গবেষণা করলেই আমরা হয়তো বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারি আমাদের জাতীয় মাছটিকে।

বাংলাদেশের মতো কানাডাতেও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ কেনার ধুম পড়ে যায়। কিছুদিন আগে কানাডার ভ্যানকুভার শহর থেকে (যেখানে আমি থাকি) ৪২ ডলার দিয়ে একটি বড় ইলিশ কিনেছিলাম। মাছটা কিনে মনটা আনন্দে ভরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উল্টো মনটা খুব খারাপ হলো কিছু স্মৃতি আর কিছু কল্পনার কথা মনে পড়ে।

সময়টা ১৯৮০ সাল, তখন আমার ছেলেবেলা, আমি টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া বাজার থেকে ইলিশ কিনতাম। তখন একটা ইলিশের দাম ছিল ২০ টাকা। সাধারণত এক ভাগা ইলিশ মাছ কিনতাম, এক ভাগের দাম ছিল মাত্র পাঁচ টাকা। আর আজ কানাডা থাকার বদৌলতে একসঙ্গে এক হালি ইলিশ কিনতে পারি। তাই, সেদিনের কথা মনে পড়লে সত্যি মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেননা এখনো বাংলাদেশে এমন লাখ লাখ পরিবার আছে, যাদের একটি ইলিশ কেনার সামর্থ্য নেই।

বড় ইলিশ মাছটি কেনার পর অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, এই রুপালি ইলিশ মাছটি ধরেছিলেন বাংলাদেশের এক হতদরিদ্র জেলে, তাঁর সঙ্গে হয়তো ছিল তাঁর এক ছেলে। আর ছেলেটি ভীষণ খুশি হয়েছিল এত বড় ইলিশ মাছ দেখে। সে চেয়েছিল মাছটা বিক্রি না করে বাড়ি নিয়ে যেতে। কিন্তু দরিদ্র জেলের তো এত বড় ইলিশটা রাখার ক্ষমতা নেই। তাকে যে মাছটা বিক্রি করে অনেক সদাইপাতি করতে হবে।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দরিদ্র জেলে ইলিশ মাছটি ধরেছে কিন্তু তার কপালে জুটল না তার পরিবার পরিজন নিয়ে ইলিশটা খাওয়ার। যখন ওই জেলে শিশুটার কথা মনে পড়ে, তখন আর ইলিশটা খেতে ভালো লাগে না। বাংলাদেশের ইলিশ খেতে তো সেই দিনই ভালো লাগবে, যেদিন বাংলার প্রতিটি ঘরে সবাই ইলিশ খেতে পারবে ।