দীর্ঘ দেড় মাসের ব্যাট-বলের লড়াই শেষে রোববার বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫’র পর্দা নামলো। ফাইনালে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডকে সাত উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জয় করে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ ব্যাটসম্যানদের আধিপত্যে শেষ হয়। তবে মিচেল স্টার্ক ও ট্রেন্ট বোল্টদের মতো বোলাররাও নজরকাড়া পারফরমেন্স উপহার দিয়েছেন।
বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে। রানবন্যার বিশ্বকাপ টানা চারটি সেঞ্চুরি, দুটি ডাবল সেঞ্চুরি, দ্রুততম ফিফটিসহ বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে। এক নজরে দেখে নেয়া যাক সেসব রেকর্ডগুলো।
টানা চার সেঞ্চুরি: এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত ঘটনা টানা চার ইনিংসে কুমার সাঙ্গাকারার সেঞ্চুরি হাঁকানো। বিশ্বকাপ তো বটে, ওয়ানডে ক্রিকেটেও আর কোনো ব্যাটসম্যান এটি করে দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংস দিয়ে সাঙ্গাকারার রেকর্ড গড়ার শুরু। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার না মানা ১১৭ রানের ইনিংস খেলেন সাঙ্গা। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে টানা তিন সেঞ্চুরি করার অনন্য রেকর্ড গড়েন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে সবাইকে ছাড়িয়ে যান এই লংকান গ্রেট। সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের পাতায় নাম খেলান তিনি। এর আগে ছয়জন ব্যাটসম্যান টানা তিনটি সেঞ্চুরি করলেও সাঙ্গাকারার মতো এমন অসাধ্য রেকর্ড গড়তে পারেননি কেউ।
ডাবল সেঞ্চুরি: বিশ্বকাপের আগের ১০ আসরে কোনো ব্যাটসম্যান যেটি করে দেখাতে পারেননি সেই ডাবল সেঞ্চুরি চলতি বিশ্বকাপে দুবার দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ক্রিস ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ক্রিস গেইল প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে ডাবল সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। এর আগে বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড ছিল গ্যারি কারস্টেনের দখলে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ১৮৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই তারকা।
কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রিস গেইলের চেয়েও অতিমানবীয় কিছু করে দেখান নিউজিল্যান্ডের ওপেনার মার্টিন গাপটিল। ২৩৭ রানের হার না মানা অবিশ্বাস্য ইনিংস উপহার দেন তিনি।
দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করেন ক্রিস গেইল। একদিনের ক্রিকেটে এটি দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড।
দ্রুততম ১৫০: বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৬৪ বলে ১৫০ রান পূর্ণ করেন ডি ভিলিয়ার্স। ওয়ানডেতে এটি দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড।
দ্রুততম ফিফটি: গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। বিশ্বকাপে এটিই দ্রুত অর্ধশতকের রেকর্ড।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছক্কা: চলতি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৬টি ছক্কা মারেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এক বিশ্বকাপে এটি সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্স মারেন ২১টি ছক্কা।
মোট ছক্কার রেকর্ড: বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এখন ডি ভিলিয়ার্স ও ক্রিস গেইলের দখলে। দুজনে সমান ৩৭টি করে ছক্কা মেরেছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিকি পন্টিংয়ের ছক্কা ৩১টি।
এক ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কা: বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলের দখলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার পথে তিনি ১৬টি ছক্কা মারেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ২৩৭ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার পথে ১১টি ছক্কা মেরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মার্টিন গাপটিল।
বাউন্ডারিতে সর্বোচ্চ রান: বিশ্বকাপে এক ইনিংসে বাউন্ডারিতে সর্বোচ্চ রান নেয়ার রেকর্ড গড়েন মার্টিন গাপটিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ২৩৭ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার পথে বাউন্ডারির সাহায্যে ১৬২ রান তোলেন তিনি। ২১৫ রানের ইনিংসে গেইল ১৩৬ রান করেন চার-ছক্কায়।
ছক্কা: এবারের বিশ্বকাপ ছক্কার রেকর্ডও গড়ে। বিশ্বকাপের এবারের আসরে সর্বোচ্চ ৩৫৪ ছক্কা হয়েছে।
পার্টনারশিপের রেকর্ড: এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে অসাধারণ এক রেকর্ড গড়েন ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই ক্যারিবিয়ান তারকা ৩৭২ রানের অনবদ্য জুটি গড়েন্। বিশ্বকাপ তো বটে, ওয়ানডে ক্রিকেটেরও সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলি ৩১৮ রানের জুটি গড়েন।
এক বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি: এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন কুমার সাঙ্গাকারা। এর আগে সৌরভ গাঙ্গুলি (২০০৩), ম্যাথু হেইডেন (২০০৭) ও মার্ক ওয়াহ (১৯৯৬) এক বিশ্বকাপে তিনটি সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান।
সেঞ্চুরির রেকর্ড: এবারের বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিরও রেকর্ড হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে সর্বমোট ৩৭টি সেঞ্চুরি হয়েছে। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপের আসরে সর্বোচ্চ ২৪টি সেঞ্চুরির মুখ দেখে বিশ্ব।
ডিসমিসালের রেকর্ড: কুমার সাঙ্গাকারা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েন। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫৪টি ডিসমিসালের রেকর্ড এখন সাঙ্গার দখলে। তিনি পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ান সাবেক উইকেটরক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে (৫২)।
এক ম্যাচ সর্বোচ্চ ডিসমিসাল: বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি ৬টি ক্যাচ নিয়ে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ২০০৩ বিশ্বকাপের ৬টি ডিসমিসালের রেকর্ডে ভাগ বসান।
এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচ (ফিল্ডার): বাংলাদেশের সৌম্য সরকার ও পাকিস্তানের উমর আকমল ফিল্ডার হিসেবে বিশ্বকাপের এক ম্যাচ সর্বোচ্চ ৪ ক্যাচ নেয়ার রেকর্ড গড়েন। এই দুজন ২০০৩ সালে ভারতের সাবেক তারকা মোহাম্মদ কাইফের গড়া চার ক্যাচের রেকর্ডে ভাগ বসান।
সর্বোচ্চ রান: আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে ৬ উইকেটে ৪১৭ রান তোলেছে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের এক ইনিংসে যেকোনো দলের এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার বিপক্ষে ৪১৩ রান করেছিল ভারত।
রানের ব্যবধানে বড় জয়: গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে ২৭৫ রানের বড় ব্যবধানে হারায় অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে যেকোনো দলের রানের ব্যবধানে পাওয়া এটিই বড় জয়। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডাকে ২৫৭ রানে হারায় ভারত। চলতি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও একই ব্যবধানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
স্ট্যাম্পিং: বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১০টি স্ট্যাম্পিং করেন শ্রীলংকান উইকেটরক্ষক কুমার সাঙ্গাকারা।
হ্যাটট্টিক: এবারের বিশ্বকাপে দুটি হ্যাটট্টিক হয়েছে। বিশ্বকাপের প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্টিক করেন ইংলিশ পেসার স্টিভেন ফিন। কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে হ্যাটট্টিক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার জেপি ডুমিনি।
এক ম্যাচে দলীয় ছক্কার রেকর্ড: কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা মিলে ৩১টি ছক্কা মারেন। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে এটি সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। বিশ্বকাপে এর আগে দুটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ২২টি ছক্কা হয়েছিল। চলতি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-জিম্বাবুয়ে এবং ২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে ম্যাচে ২২টি ছক্কার মার মারেন দুই দলের ব্যাটসম্যানরা।