ক্রিকেট বিশ্ব অনেক ব্যতিক্রমী খেলোয়াড় দেখেছে। এক দেশে জন্ম নিয়ে অন্য দেশের হয়ে খেলেছেন এমন খেলোয়াড় আছেন বেশ কয়েকজন। প্রথমে নিজ দেশের হয়ে খেলেছেন, পরে অন্য দেশের হয়ে খেলেছেন। এমন খেলোয়াড়দের তালিকাটাও লম্বাই বটে। এক বিশ্বকাপে একটি দেশের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন আর পরের বিশ্বকাপেই আবার নিজ দেশের হয়ে মাঠে নেমেছেন; খেলেছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ- এমন ব্যতিক্রম কতটিই বা আছে!
ব্যতিক্রমধর্মী এই খেলোয়াড়ের নাম ডগলাস রবার্ট ব্রাউন। ডগি ব্লাউন হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। ব্রাউন ১৯৬৯ সালের ২৯ অক্টোবর স্কটল্যান্ডে জন্ম নেন । ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ব্যাট ও বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করেন। যার পুরস্কার হিসেবে তিনি ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পান।
১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেক হয়। এরপর ২০০২-০৩ মৌসুমে তিনি নামিবিয়ার কোচ হন। নামিবিয়াকে ২০০৩ বিশ্বকাপে তত্ত্বাবধান করেন। মজার ব্যাপার হল, ২০০৭ বিশ্বকাপে তিনি স্কটল্যান্ডের হয়ে আবার মাঠে নামেন। বিশ্বকাপ খেলেন। একই বছর অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিনি স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলেন। বর্তমানে তিনি তার প্রিয় ক্লাব ওয়ারউইকশায়ারের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বিবিসি স্পোর্টসের আলোচক হিসেবে কাজ করছেন।
তরুণ বয়সে ব্রাউন অ্যালোয়া একাডেমিতে পড়াশুনা করেছেন। সেখানে তিনি ক্লাকমানান ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্কটল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে ফুটবলও খেলতেন। শুধু তাই নয়, তিনি ফেল্টহ্যাম রাগবি ফুটবল ক্লাবের ফুলব্যাক হিসেবেও খেলতেন। এরপর তিনি ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯২ সালে স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলার সময় সর্বপ্রথম তিনি ওয়ারউইকশায়ার ক্লাবের নজরে আসেন। ওই বছরই তিনি ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন ও কাউন্টি ক্রিকেট খেলেন। বলতে গেলে ব্রাউন তার গোটা ক্যারিয়ার কাউন্টি ক্রিকেট খেলেই পার করে দিয়েছেন। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিনি ব্যাট হাতে ১২ হাজার ৫০০ রান করেছেন ও বল হাতে ৮৫০ উইকেট নিয়েছেন।
১৯৯৭ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত চার জাতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ইংল্যান্ড দলে ডাক পান। ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের হয়ে তার অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে বল হাতে কোনো উইকেট পাননি। ব্যাট হাতে করেন ৬ রান। কিন্তু ইংল্যান্ড জয় পায় ৭ রানে। ইংল্যান্ডের পরের ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স করেন ব্রাউন। ৭ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ২৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিলো ওয়ালাক ও ব্রায়ান লারার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৬ রান করেন। ইংল্যান্ড জয় পায় ৪ উইকেটের ব্যবধানে। ১৯৯৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষেই ইংল্যান্ড দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
এরপর ২০০৩ সালে নামিবিয়ার কোচ হন ও দলটিকে বিশ্বকাপে তত্ত্বাবধান করেন। তিনি দলটিকে ২০০২-০৩ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ওয়ানডেতেও তত্ত্বাবধান করেন। নামিবিয়ার হয়ে তিনি একটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচও খেলেছিলেন।
২০০৫ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের হয়ে আইসিসি ট্রফিতে খেলেন। বল হাতে তিনি এই টুর্নামেন্টে ১১ উইকেট নেন। আর ফাইনাল ম্যাচে ৫৯ রান করে স্কটল্যান্ডকে জেতান। ফলে স্কটল্যান্ড অস্থায়ীভাবে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়। এরপর থেকে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত ডগলাস রবার্ট ব্রাউন স্কটল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন। ২০০৬ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের হয়ে ইউরোপিয়ান ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০০৭ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেন। একই বছর নরথান্টস ক্লাবের বিপক্ষে খেলার সময় ইনজুরিতে পড়েন ও মাঠ ছাড়েন। ওটাই ছিল তার শেষবারের মতো মাঠ ছাড়া। এরপর আর কোনো দলের পক্ষে মাঠে ফেরা হয়নি তার। ২০০৭ সালের শেষের দিকে ব্রাউন ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ও ওয়ারউইকশায়ার ক্লাবের কোচের দায়িত্ব নেন।
ব্রাউনের সঙ্গে বাংলাদেশেরও কিছু সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৩ সালে তিনি যখন নামিবিয়ার কোচ ছিলেন তখন দলটি একটি প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল। পরে স্কটল্যান্ডের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেলেও একটিতেও জয় পাননি।
দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও স্কটল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের কিংবদন্তি হিসেবে ডগলাস রবার্ট ব্রাউন ‘হল অব ফেম’-এ স্থান করে নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সংক্ষেপ :
ডগি ব্রাউন ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে ৩১৯ রান করেছেন। যেখানে কোনো শতক নেই। একটি অর্ধশতক রয়েছে। বল হাতে নিয়েছেন ২২টি উইকেট। যেখানে সেরা বোলিং ফিগার ৩৭ রানে ৩ উইকেট।
স্কটল্যান্ডের হয়ে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে ১ রান ও বল হাতে কোনো উইকটে পাননি। তিনি সবচেয়ে সফল প্রথম শ্রেণি, লিস্ট এ ও কাউন্টি ক্রিকেটে।