Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

cityপাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি সুউচ্চ দালান। আছে নয়নাভিরাম বাগান। আছে বাচ্চাদের খেলার মাঠ, রোমান নকশায় তৈরি সিনেমা হল, মনোহারি দোকান, রেঁস্তোরা আরও কত কি! কিন্তু নেই শুধু মানুষ। কারণ এই সুন্দর শহরটিতে যে নেই জীবন-যাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ পানি! আর তাই এই ঝাঁ চকচকে শহরটি এখন মনুষ্যহীন এক নিস্তব্ধ পুরী।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত ঘুম ভাঙে রকেট-মর্টারের বিস্ফোরণের শব্দে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন- বিবাদমান দুই পক্ষের নিয়ত লড়াইয়ের জায়গা এটি। অথচ এরই একপাশে গড়ে উঠেছে এক অনিন্দ্য সুন্দর শহর। নাম তার রাওয়াবি। সংঘাতের পাশে এর অবস্থান যেন শান্তি প্রতিষ্ঠার আকুলতাকেই প্রকাশ করে। এর স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভুত কোটিপতি বাশার মাসরি। কী চিন্তা কাজ করেছিল এর নির্মাণে? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি ফিলিস্তিনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প। এর কাছাকাছি কেন, পরিমাপে এর অর্ধেক প্রকল্পও এর আগে কখনও হয়নি এখানে। প্রায় ২৫ হাজার লোকের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। আমার ইচ্ছে ছিল এমন একটি আবাসন গড়ার, যেখানে ফিলিস্তিনিরা সংঘর্ষের বাইরে শান্তি খুঁজে পাবে। নিজেদের জীবনটাকে একটু অন্য চোখে দেখবে। একটু সুখের স্পর্শ পাবে তাদের সর্বদা অশান্ত আর উত্কণ্ঠায় ভরা জীবনে।’

chardike-ad

কিন্তু বাশার মাসরির স্বপ্ন এখনও কল্পনাতেই রয়ে গেছে। মানববসতি গড়ার জন্য যে পানির প্রয়োজন, তার সরবরাহই যে বন্ধ। শহরটির অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণ শেষ হওয়ার পর থেকেই পানির সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাশার। শহরের চাহিদার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন এ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘জয়েন্ট ইসরায়েলি-প্যালেস্টাইন ওয়াটার কমিটি’কে। শর্ত পূরণ করায় এ আবেদনের অনুমোদনও পাবার কথা। কিন্তু বছরখানেক ধরে একত্রে কোনো সভাই করেনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের এ যৌথ কমিটি। ফলে ঝুলে আছে পানি সরবরাহের বিষয়টি। একই সঙ্গে ধূসর হচ্ছে রাওয়াবিতে মানুষের বসবাস। যেমনটা ঘটেছে আইমান ও সুহাদ ইব্রাহিমের ক্ষেত্রে। ২০১৪ সালের প্রথমদিকে এ শহরের বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। আশা ছিল এখানেই একটি রেঁস্তোরা খুলে জীবিকা নির্বাহ করবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। এখন তাই বেশ হতাশই হয়ে পড়েছেন এই দুই ভাই।

তবে বাশার মাসরির এ উদ্যোগ কিন্তু ফিলিস্তিনের সবাই ভালো চোখে দেখছে না। শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে এই প্রকল্প। অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে স্বাভাবিক করার মিশনে নেমেছেন এই ব্যবসায়ী। তার মূল লক্ষ্য শুধুই লভ্যাংশ। আর সেজন্য ইসরায়েলের সঙ্গেও তিনি হাত মেলাতে পারেন। আর রাওয়াবিকে তারা দেখে ধনীদের সুযোগ হিসেবে। রাওয়াবির একটি গড়পরতা ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ৯৫ হাজার মার্কিন ডলার। পার্শ্ববর্তী শহর রামাল্লার তুলনায় কম হলেও অধিকাংশ ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে তা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাশার বলেন, ‘আমি ইসরায়েলকে দখলদারই মনে করি। এটি আমাদের জমি। ওরা পশ্চিম তীরে গায়ের জোরে আবাস গড়ছে। আমি এই দখলদারিত্বের ঘোর বিরোধী। সুতরাং ইসরায়েলের সঙ্গে আমার কোনো মিত্রতা থাকতে পারে না এবং নেইও।’ ফ্ল্যাটের দামও মধ্যবিত্তের নাগালেই আছে বলে দাবি করলেন তিনি। ‘মধ্যবিত্ত ফিলিস্তিনিরা এটি কিনতে পারবেন বলেই মনে করি আমি। তবে এর দাম আরও কমানো যেত, যদি ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ আরেকটু সহায়তা দিত’।

সবশেষে বাশার জানালেন হাজার প্রতিবন্ধকতায়ও ফিকে না হওয়া নিজের স্বপ্নের কথা। ‘আমি কল্পনায় দেখতে পাই, রাওয়াবির রেঁস্তোরাগুলো মানুষের ভিড়ে পরিপূর্ণ। মাঠে খেলা করছে শিশুরা। ফ্ল্যাটগুলোতে প্রতিবেশীরা কথা বলছে একে-অপরের সাথে। সিনেমা হল থেকে ফিরছে মানুষ, তাদের মুখে আছে প্রশান্তি আর সুখ। এসব দৃশ্যকল্প আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। ফিলিস্তিনের মানুষের এতটুকু সুখ-শান্তি আমি দেখে যেতে চাই। চাই এসবের ভাগীদার হতে’, বললেন স্বপ্নালু বাশার মাসরি।

[তথ্যসূত্র: বিবিসি]