Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Khaleda_ziaসাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের দায়ের করা সব মামলাই সচল করা হচ্ছে। দু’টি মামলায় বিচার শুরু হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা বাতিলে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি ও রায় ঘোষণার জন্য ৫ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১৬ আসামিকে ১৩ এপ্রিল হাজির হতে বলেছেন বিচারিক আদালত।

অপর দিকে গ্যাটকো সংক্রান্ত দু’টি মামলা এবং নাইকো সংক্রান্ত একটি মামলা হাইকোর্টে কার্যতালিকায় এসেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুদকের দায়ের করা পাঁচটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা, গ্যাটকো মামলা ও নাইকো মামলা।

chardike-ad

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা : আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ আদালতে বিচার চলছে। এতিম শিশুদের জন্য দেয়া বিদেশী সাহায্যের অর্থ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের (এতিমখানা) নামে বরাদ্দ দেয়া দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও অন্যদের বিরুদ্ধে দুদক মামলাটি করে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, মাগুরা-২ আসনের সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, হোসাফ গ্রুপের এমডি ও চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এ মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

অন্য দিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে কেনা জমির মূল্য কম দেখিয়ে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়া ও অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা বাতিলে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি ও রায় ঘোষণা ৫ এপ্রিল ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা করে। মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক তির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এতে বলা হয়, চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সাথে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রণাবেণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা তি করেছেন। এতে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৬ আসামিকে ১৩ এপ্রিল হাজির হতে বলেছেন বিচারিক আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এর বিচারক হোসনে আরা বেগম সোমবার এ আদেশ দেন। গ্যাটকো মামলা : বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় চট্টগ্রাম ও কমলাপুরের কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মেসার্স গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপে এক হাজার কোটি টাকা তি করার অভিযোগ আনা হয়। ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই আদালত মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং রুল জারি করেন। সময়ে সময়ে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এ ছাড়া এ মামলায় জরুরি মতা অধ্যাদেশ যুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালে আলাদা একটি রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেন। ওই দু’টি রুলের ওপর শুনানির জন্য দুদক আলাদা আবেদন করে, যা শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকাভুক্ত রয়েছে। নাইকো মামলা : কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সাথে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১০ হাজার কোটি টাকা তি করার অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এ মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনের পরিপ্রেেিত ২০০৮ সালের ৯ জুলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট এবং রুল জারি করেন। ওই রুলের ওপর শুনানির জন্য দুদক আবেদন করেছে, যা হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে তার আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। একজন সৌদি ভদ্রলোক জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা দিয়েছিলেন। এখানে সরকারের এক টাকাও ক্ষতি হয়নি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একজন ভক্ত বিদেশ থেকে জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তার স্মৃতিকে জিইয়ে রাখার জন্য এই টাকা পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশে।

তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে তার শুনানি হলে এবং তিনি ন্যায়বিচার পেলে সব মামলাই বাতিল হয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার এসব করছে মানুষ যাতে নির্যাচন না চায়। তবে মামলা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান না করলে তাতে দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সরকার বা আওয়ামী লীগ কোনো মহলের জন্যই লাভ হবে না। সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগেরই।

দেশের মানুষ বিশ্বাস করে ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। কারো বিরুদ্ধে একের পর এক মামালা দেয়া ষড়যন্ত্রমূলক ও অপরাধমূলক কাজ। অন্য দিকে দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো সংক্রান্ত দু’টি মোকদ্দমা এবং নাইকো মামলা হাইকোর্টের লিস্টে আছে। এ ছাড়া বড়পুকুরিয়া খনি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষামান রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা দুদকের অন্য সব মামলাই সচল করছি। খালেদা জিয়ার মামলা আলাদাভাবে করা হচ্ছে না। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বা রাজনৈতিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সচল করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, নিজেদের গরজেই দুদক মামলা পরিচালনা করছে।