জিম্বাবুয়েকে হারিয়েই ছুটে যায়নি ভারত মেলবোর্নে। গতকাল সারা দিনই বিশ্রামে কাটাল তারা অকল্যান্ডে। আজ উড়াল দেবে তারা কোয়ার্টারের ভেনু মেলবোর্নে। ভারতীয়রা যেমন দিনটা কাটিয়েছে বিশ্রামে, তেমনি বাংলাদেশও। মেলবোর্নে যাদের আত্মীয় আছেন, কেউ কেউ ছুটেছেন সেখানে। কেউ বা অন্য কোনো জায়গায়।
যেহেতু একা বাংলাদেশ দল কোয়ার্টারের ভেনুতে, তাই তো উত্তাপও টের পাওয়া যায়নি। আজ ভারতীয় দল পৌঁছলেই শুরু হবে কোয়ার্টারের সেই উত্তাপ। বাংলাদেশ দলের মধ্যেও হয়তো ফিরে আসবে উত্তেজনা! অবশ্য দুই দল কী করবে বা না করবে, তার আগে অন্য এক যুদ্ধ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। সেটি হলো দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বাকযুদ্ধ। ফেসবুক তো আছেই। এ ছাড়াও মিডিয়ায়ও আছে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য।
এতে অবশ্য ফ্রন্ট লাইনে ভারতীয়রাই, কারণ প্রচণ্ড টেনশনে এখন ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটারসহ সমর্থকেরা। ভারতের পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে অনেক রিপোর্টও হয়েছে যে, বাংলাদেশের চেয়ে বরং ইংল্যান্ডই ভালো ছিল! ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সর্বশেষ তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে ইংল্যান্ড। তবুও ইংল্যান্ডকেই বেছে নেয়ার কারণ ভিন্ন।
ইংল্যান্ডের বর্তমান পারফরম্যান্স যেমন ভালো নয়, তেমনি টানা তিন ম্যাচ হেরে এবার ভারতের পাল্টা অ্যাটাক করার কথা। এমসিতে সেটিই বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু তার চেয়েও তাদের কাছে ঢের শক্ত দল মনে হয় বাংলাদেশকে। কারণও লিখেছে। ২০০৭ সালে বলে কয়েই ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আগের দিন মাশরাফি বলেছিলেন, ভারতকে হারাতে চান তারা। গোটা দলেই ভারতকে হারানোর একটা আবহ বিরাজ করেছিল; অথচ সেবার ভারত ছিল টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট। ফলে আবারো ভারত।
আবারো যখন বাংলাদেশ, তখন ম্যাচের হিসাব হচ্ছে অন্য রকম। বাংলাদেশকে ভয়ের কারণ আরেকটি রয়েছে। ইংল্যান্ড বা যেকোনো দলে যেমন স্টার বা সম্ভাব্য তারকা বেছে নিয়ে প্লান করা যায়, বাংলাদেশ দলে এমনটি নেই। কে কোন ম্যাচে কী করবে সেটিই ঠাহর করা যায় না। ভয় সেখানেই। এক তামিম, সাকিবকে নিয়ে প্লান করা হলো। আসল কাজ করে দিলেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ। এ ছাড়াও সৌম্য সরকার, সাব্বিররা যেভাবে ব্যাটিং করেন, সেটি তো আসলেই ভয়ের কারণ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই শুরুতে দুই উইকেট হারানোর পর প্রথম ১০ ওভারে ২৯ রান করেছিল বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচের মতো ব্যাটিং করে। সেই স্কোর নিয়ে গিয়েছিলেন তারা ২৮৮/৭ তে। তা হলে প্রথম ১০ ওভারে রান যদি ৬০-৭০ হতো, তাহলে রান কোথায় দাঁড়াত। বিশেষ করে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে, হ্যামিল্টনে তার চেয়েও আরো উন্নত নৈপুণ্য ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে নিজেদের ম্যাচের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে কয়েকজন সিনিয়র ভারতীয় সাংবাদিক খেলা কাভার করেন। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের খেলা মনিটরিং।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে বেশি টেনশনে ভারত থাকার কারণ আছে আরো। বাংলাদেশের টার্গেট ছিল কোয়ার্টার। এখন তারা একেবারেই টেনশনহীন। ভারতের টার্গেট তো তারও ওপরে। তাহলে ম্যাচ হবে টেনশন ফ্রি আর টেনশনে থাকা দুই দলের মধ্যে। হেরে গেলে ভারতের সম্মান শেষ। আর হারানোর তো কিছুই নেই বাংলাদেশের। বিষয়টি চিন্তা করেই ভারতের সাবেক ক্রিকেটার নভোজিৎ সিং সিধু এরই মধ্যে উল্টাপাল্টা কথাও বলেছেন।
তার বক্তব্য বরাবরের মতোই যে, বাংলাদেশ কোনো দলই না। ভারতকে কোয়ার্টারের জন্য কোনো চিন্তাই করতে হবে না। এটি ভাষান্তর করে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করা হলো। তবে সিধুর ভাষায় ছিল অশ্রাব্য গালিতুল্য। অস্ট্রেলিয়ান লিজেন্ড টম মুডি বলেই দিয়েছেন, ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় সহজে হবে না। তিনি এর পক্ষে অনেক যুক্তি দিয়েছেন।
তেমনি গতকালও ভারতীয় লিজেন্ড সুনিল গাভাস্কার বললেন, ‘ভারতের কোয়ার্টারের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে সহজে নেয়া ঠিক হবে না’। তিনি আরো বলেন, ‘ধোনি যদি এ কাজ করেন, তাহলে হবে মারাত্মক ভুল’। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ও পাকিস্তানের সাবেক কোচ জিওফ লসন তার এক কলামে লিখেছেন, ‘র্যাংকিংয়ে ভারত অনেক ওপরে হলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি মোটেও সহজ হবে না। এর ব্যাখ্যায় তিনি বিশ্বকাপের আগে ভারতীয়দের অস্ট্রেলিয়া সফরের ম্যাচগুলোর দুর্দশাও তুলে ধরেন।
আসলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পরও বাংলাদেশ যেভাবে নিউজিল্যান্ডের দুর্বলতাগুলো বিশ্বকাপের ক্রিকেট এক্সপার্টদের সামনে তুলে ধরেছে, সেটি তো পারেনি অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডও। বাংলাদেশ হাসিমুখেই এমনকি মূল ক্রিকেটার মাশরাফিকে বাইরে রেখেও জয়ের পর্যায়েই গিয়েছিল। এটি ঠিক আরো তিন কোয়ার্টার রয়েছে, তার চেয়েও সবার আকর্ষণ যেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ ঘিরেই। সবারই প্রত্যাশা বাংলাদেশ যে ক্রিকেট খেলছে, তাতে ভারতেরও বিপদের কারণ হতে পারে। তা ছাড়া এটি তো বাস্তব যে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস এখন যে পর্যায়ে, তাতে বাস্তবচিত্র তো অমনই।