Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Tomtom1ঘোড়ার গাড়ি রাজকীয় ঐতিহ্যের অংশ। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন আমলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। ঢাকাতেও ঘোড়ার গাড়ি সে সময়ই আসে। ইংরেজদের দেখাদেখি স্থানীয় অভিজাত শ্রেণির মানুষও এই সুবিধা নেয়। এক সময় তা চলে আসে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে। রাজকীয় বাহন ঘোড়ার গাড়ি এ দেশের ঐতিহ্যে ১৫০ বছরের বেশি সময় পার করেছে। বর্তমানে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। কেবল পুরান ঢাকায় স্বল্প পরিসরে আজো টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এ বাহনটি।

ঘোড়ার গাড়ি অনেক জায়গায় ‘টমটম’ নামেও পরিচিত। সে সময় ঘোড়ার গাড়ির চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা শহরে রাস্তাঘাটের সংস্কার করা হয়। প্রথমে ইট-সুরকি, সিমেন্ট-বালি পরে পিচঢালা ইট দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল। এখন সেই ঢাকা যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তাজুড়ে শুধু চোখে পড়বে রিকশা, গাড়ি, বাস-মিনিবাস। এখন বিভিন্ন উৎসবের দিনেও নেই যানযট থেকে মুক্তি। যান্ত্রিকতার ভিড়ে ঢাকা শহরে সেই পুরনো ঐতিহ্যবাহী টমটম হারিয়ে যেতে বসেছে।

chardike-ad

অতীতে রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহ, জমিদাররা ঘোড়ার গাড়িকেই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন। ঘোড়ার গাড়ি ছিল রণাঙ্গনের রসদ সরবরাহের প্রধান বাহন। ১৮৩০ সালে ইংরেজ শাসন আমলে ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। এখনো পুরান ঢাকার সদরঘাট-গুলিস্তানে যাত্রী পরিবহণের জন্য ঘোড়ার গাড়িকে অন্যতম বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

যাত্রী পরিবহণ ছাড়াও টমটম ব্যবহৃত হয় বিয়ে, পূজা, বিভিন্ন দিবসের শোভাযাত্রায়, সিনেমার শ্যুটিংয়ে। এসব কাজে টমটমকে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। কোচোয়ান ও হেলপারের জন্যও ওইসব অনুষ্ঠানের সময় রয়েছে বিশেষ পোশাক। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বিয়েতে ঘোড়ার গাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিয়ে উপলক্ষে ঘোড়ার গাড়িগুলো রঙিন করে সাজানো হয়। ফুলের মালা দিয়ে আর রঙিন কাগজ কেটে নকশা বানিয়ে সাজানো হয় ঘোড়া আর গাড়ি দুটোকেই।Tomtom2

অনেকেই পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত ঘোড়ার গাড়ির গাড়োয়ানি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই গাড়ি থেকে দৈনিক দুই-আড়াই হাজার টাকা আয় হয় বলে জানা গেছে। যাত্রীদের আজও রাজা-বাদশাহদের ভ্রমণের আবহ উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়। মানুষ আজও নতুন প্রজন্মকে ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ছুটে আসেন ঘোড়ার গাড়ির কাছে। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ঘোড়ার গাড়িকে দেখা হয় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে।

বর্তমানে বঙ্গবাজার, ফায়ার সার্ভিস, পশু হাসপাতাল, বকশীবাজার, নারিন্দা, সিদ্দিকবাজার, কেরানীগঞ্জ এলাকায় অন্তত ৪০-৫০টি ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন পুরান ঢাকার রাস্তায় চলাচলের পাশাপাশি ঈদ, পহেলা বৈশাখ, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে এই গাড়িগুলোর কদর আজও রয়েছে। এই কদরের জোরেই বেঁচে আছে কয়েক পুরুষ ধরে চালিয়ে যাওয়া টমটমের ব্যবসা এমনটাই জানালেন রফিক নামের এক কোচোয়ান।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের ধারক টমটমে এক জোড়া ঘোড়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে একটি ঘোড়া দিয়েও গাড়ি টানা হয়। চার চাকাবিশিষ্ট গাড়ির সামনে, মধ্যে ও পেছনে মোট ১৪ জন যাত্রী বসতে পারে। সঙ্গে কোচোয়ান ও হেলপারের আসনও রয়েছে।

যান্ত্রিক বাহন না হলেও একটি টমটম রাস্তায় নামাতে গেলে খরচ নেহাত কম পড়ে না। লোহার ও স্টিলের তৈরি দুই ধরনের ঘোড়ার টমটম রয়েছে পুরান ঢাকায়।গাড়িটি তৈরি করতে ব্যয় হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। একটি ভালো জাতের ঘোড়া কিনতেও লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সব মিলিয়ে একটি ঘোড়ার গাড়ি বানাতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ পড়ে।

Tomtom3টমটম চলে পিচঢালা মসৃণ রাস্তায়। স্বভাবতই দীর্ঘদিন পাকা রাস্তায় চলতে গিয়ে ঘোড়ার পায়ের খুর ক্ষয়ে যায়। এ জন্য খুরে পরাতে হয় নাল (লোহার এক ধরনের খাপ)। আর গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় ঘোড়ার গতি সামাল দিয়ে। এ জন্য ঘোড়ার নাকে রশি পরিয়ে টানা বাঁধা হয়। কোচোয়ান (চালক) যেদিকে টান দেন ঘোড়া সেদিকেই ছুটতে থাকে।

কোচোয়ান রফিক জানান, রাজকীয় বিয়ের আবহ চায় পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এজন্য বিয়েবাড়িতে টমটমের চাহিদা বেশি থাকে । দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও ডাক পান তারা।

কোচোয়ান রফিক জানান, ঘোড়ার পেছনেও খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে ছোলা, গম ও ভুসি বুটের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। ভুসি আর ঘাস দিয়ে এক জোড়া ঘোড়ার পেছনে তাদের খরচ হয় ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। তাই লাভও আগের মতো হয় না বলে তিনি জানান।

তবে ঐতিহ্যবাহী এই রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি টিকিয়ে রাখতে ঘোড়ার খাবারের দাম কমানো এবং ঘোড়ার নিয়মিত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জোর দাবি জানিয়েছেন কোচোয়ানরা।

সৌজন্যেঃ রাইজিংবিডি