বিশ্বকাপের চার খেলা শেষে বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ৫। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে একটি জয়ে ইংল্যান্ডের ঝুলিতে জমেছে মাত্র ২ পয়েন্ট। উভয় দলের হাতে রয়েছে দুটি করে ম্যাচ। এর একটিতে আবার সোমবার মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি। তাই পরের পর্বে যেতে হলে সোমবার বাংলাদেশকে হারাতেই হবে ইংলিশদের। অন্যদিকে, কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেতে বাংলাদেশের দরকার বাকি দুই ম্যাচ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট আর ইংল্যান্ডের চেয়ে শ্রেয়তর রানরেট। জিতে গেলে তো কথাই নেই। ৫ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট ঝুলিতে পুরে ইংল্যান্ডের হাতে বাড়ি ফেরার টিকেট গছিয়ে দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা আরামসে খেলবে বাংলাদেশ। আবার বাংলাদেশ হারলেও ইংল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হবে না। তখন উভয় দলকেই তাকিয়ে থাকতে হবে নিজেদের শেষ ম্যাচটার ফলাফলের দিকে। সেখানে অবশ্য দুর্বল প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান থাকায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে ইংল্যান্ডই।
এসব কারণে বলতে গেলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি বাঁচা মরার লড়াই হতে চলেছে ইংলিশদের জন্যে। এদিন মাঠের ফলাফল কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে, তবে বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্স তাদের চোখ রাঙানি তো দিচ্ছেই, সঙ্গে রয়েছে এবারের অাসরে নিজেদের ছায়া হয়ে পারফর্ম করার নজির। এ ম্যাচে নিশ্চিত ভাবে ফেবারিট কোন দল ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও সরাসরি এর উত্তর দিতে পারছেন না। ইংলিশ শিবির থেকেও বলা হচ্ছে, এবার আর প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে নিশ্চিত জয়ের কথা ভাবতে পারছে না তারা। উত্তেজনার পারদ চড়ানো এই ম্যাচটি ঘিরে তাই চলছে নানা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকরা বরং খুঁজে পেয়েছেন এমন বাঁচা মরার ম্যাচে ইংলিশদের হারের জন্যে দায়ী হতে পারে এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এগুলো হচ্ছে:
১. অতীত স্মৃতির চোখ রাঙানি
২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে জয় পায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২২৫ রানে গুটিয়ে যায়। ২২৬ রানে তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস (সোমবারের খেলায় সম্ভাব্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা যেতে পারে) শুরুতেই উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। সেই পারফরম্যান্স থেকেই প্রেরণা পাবে বাংলাদেশ। এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে দলটিকে উৎসাহিত করবে। যা ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে পারে ইংল্যান্ডকে।
২. ঘূর্ণিজাদু
ইংল্যান্ডের অনন্ত ভয়ের কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের স্পিনাররা। সংবাদমাধ্যমের কাছে এটাকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে তারা প্রকাশও করেছে। এই ম্যাচে বাংলাদেশের স্পিনারদের ব্যবহার করার অনেক সুযোগ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ২০১১ সালে সাকিব আল হাসান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন। অার এই বিশ্বকাপে ওভার প্রতি পাঁচের কম রানের ইকোনোমি নিয়ে মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছেন অন্যতম স্পিনার মাহমুদুল্লাহ। এছাড়া সাব্বির রহমানও লেগ স্পিনার হিসেবে রয়েছেন। যদিও পেসারদের চাইতে স্পিনারদের সফলতা কম, তবুও ইংল্যান্ড যদি ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারে তাহলে পরিসংখ্যান বিপরীত হতে পারে।
৩. তামিম ‘হুমকি’
বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, ঝড়ো ইনিংস খেলাটা যার স্বভাবসুলভ। অার ইংলিশদের বিরুদ্ধে ভালো পারফরম্যান্সের রেকর্ডও রয়েছে তামিমের। এর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে ঢাকায় ১২০ বলে করেছিলেন ১২৫ রান। প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮১ এবং সর্বশেষ খেলায় স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রান করেন। যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের জন্যে তার ভালো ব্যাটিংটাই কাজে দিয়েছিল। এবারও তামিম হতে পারেন ইংলিশ বোলারদের জন্য হুমকি স্বরূপ!
৪. অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশকে হারাতে নানান পরিকল্পনার ফাঁদ পাতবে ইংল্যান্ড দল। কিন্তু কাজ দেবে কোন সমীকরণ? যে বাংলাদেশ স্কটল্যান্ডের সঙ্গে তিনশ’র বেশি রান অনায়াসে টপকে জয়ী হয়েছে সেই দলের বিপক্ষে ছক কষবে তারা, নাকি গত জুনে হোম সিরিজে ভারতের সঙ্গে ১০৬ রান তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল সেই দলটি নিয়ে? বাংলাদেশ যেভাবে আফগানিস্তানকে ১৬২ রানে ভূপাতিত করেছিল সেভাবে, নাকি স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বোলিং করতে গিয়ে ৩১৮ রান দিয়েছিল তাদের নিয়ে? বলতে গেলে, অননুমেয় বাংলাদেশকে নিয়েই পরিকল্পনা করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। সেই পরিকল্পনা করতে গিয়ে হয়তো তাদের ঘুমই হারাম এখন!
৫. ইংলিশদের নিষ্প্রাণ পারফরম্যান্স
বলতে গেলে এই টুর্নামেন্টে এখনও নিজেদের ছায়া হয়েই খেলেছে ইংল্যান্ড দল। জ্বলে উঠার মতো কোনও লক্ষণ দেখাতে পারেনি তারা। পরিস্থিতি যদি এই ম্যাচেও এমনই থাকে তাহলে কপালে খারাবি আছে তাদের। আর কে না জানে, কোটি কোটি বাংলাদেশি আজ এমন ভঙ্গুর ইংল্যান্ডকেই আশা করবে নিজেদের সামনে।
ক্রিকেট বোঝেন আর নাই বোঝেন নিজেদের দলের এমন আগুন ম্যাচ দেখতে একদম ভুলবেন না, আর ফল যাই হোক না কেন আপনার সমর্থন থাকুক টাইগারদের সঙ্গেই।