কোরিয়ার সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্যটন স্থান দ্বীপ জেজু। শুধু কোরিয়া নয়, সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ পর্যটক আসছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের সমাহার এই দ্বীপটি দেখতে। ২০১১ সালে বহুল আলোচিত প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যেও স্থান পেয়েছে জেজু দ্বীপ। দক্ষিণ এশিয়া এমনকি ইউরোপ আরেরিকা থেকে হাজার হাজার নব-দম্পতি মধুচন্দ্রিমায় আসেন জেজুতে। জেজুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে লিখেছেন মো. মহিবুল্লাহ।
জেজু দ্বীপ বা জেজু-দো দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় দ্বীপ এবং ক্ষুদ্রতম প্রদেশ। প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত থেকে দ্বীপটির সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বীপটি পশ্চিম থেকে পূর্বে ৭৩ কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১ হাজার ৯৫০ মিটার। দ্বীপটি গঠিত হয়েছে ৩৬০টি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির সমন্বয়ে। পূর্বে জেজু দ্বীপকে ডাকা হতো জি.জি ক্যাডা নামে যার অর্থ আগ্নেয়গিরি। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জেজু দ্বীপ।প্রায় ১৮৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে রয়েছে ২টি শহর ও ৫টি গ্রাম। দ্বীপের মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ যাদের বেশিরভাগই নারী। গল্প প্রচলিত আছে একসময় এ অঞ্চলে মাছ ধরাই ছিল একমাত্র পেশা, তখন সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে অনেকে পুরুষই আর ফিরে আসতে পারতো না। আর তাই দ্বীপে এখন নারীদের আধিক্য!
জেজু দ্বীপে রয়েছে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে সৃষ্টি একটি লেক। অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট বিচিত্র আকৃতির সব পাথরে একাকার পুরো দ্বীপ। এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাড়ায় ৩৩.৫ ডিগ্রী, জানুয়ারির দিকে সর্বনিম্ন প্রায় ১ ডিগ্রীতে নেমে আসে। সমুদ্র থেকে আসা মৃদুমন্দ বাতাস নাতিশীতোষ্ণ একটা আবহাওয়া ধরে রাখে বছরজুড়ে।
পর্যটকদের কাছে জেজু দ্বীপের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছেই। কোরিয়ান ও জাপানীদের কাছে ছুটি কাটাতে বিশেষ করে হানিমুন উদযাপনে জেজু দ্বীপ অন্যতম পছন্দ। হাল্লা পর্বতে আরোহণ, সমুদ্রের তীরে বসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা, ঘোড়ায় চড়ে প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ, রাজকীয় জলপ্রপাত দর্শন, শিকার করা, মাছ ধরা কিংবা শুধুই সৈকতে অলস সূর্যস্নান ছাড়াও বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে আছে বছরের বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতা, বসন্তে চেরি উৎসব, মধ্য গ্রীষ্মে নৈশকালীন সমুদ্র উৎসব, হেমন্তে ঘোড়ার উৎসবসহ আরো অনেক অনুষ্ঠান।
এ পর্যন্ত জেজু দ্বীপের তিনটি দর্শনীয় স্পট ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। হাল্লাসান পর্বত, সিওংসান ইলচুলবোং-এর চূড়া ও প্রাকৃতিক লাভা টিউব গুহা জিউমোরি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১,৯৫০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন হাল্লাসান পর্বতের চূড়াকে বলা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ বিন্দু। পাহাড়টি দ্বীপের প্রায় কেন্দ্র থেকে বিস্তৃতি লাভ করেছে। পলি জমে তৈরি হওয়া প্রকাণ্ড ও প্রাচীন দুর্গের মতো পাহাড় সিওংসান ইলচুলবোং যা এক বিশেষ ধরনের আগ্নেয় অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট। জিউমোরি গুহাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাভা টিউব গুহাগুলোর একটি। জেজু দ্বীপ ২০১১ সালের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে প্রাথমিক মনোনয়ন লাভ করেছিল।
বারোমাসি সামুদ্রিক হাওয়া, রকমারি পাথরের রাজত্ব আর নারী প্রধান জনগোষ্ঠীর দ্বীপটিকে স্থানীয়রা বলে থাকেন “সামাদো আইল্যান্ড” বা “তিন প্রাচুর্যের দ্বীপ”। মুগ্ধ পর্যটকের চোখে “বিধাতার দ্বীপ” কিংবা নবদম্পতিদের কাছে “হানিমুন ল্যান্ড” যে নামেই বিশেষায়িত হোক না কেন জেজু দ্বীপের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আকৃষ্ট করবে যে কাউকেই, নয়ন জুড়াবে ছেলে-বুড়ো সবার!