চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণার পর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার কিছুদিন পরই গুলশানের কার্যালয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ফলে দলের সিনিয়র ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার নিয়মিত যোগাযোগে ছন্দপতন ঘটে।
এদিকে প্রাথমিক অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ করা হলেও বর্তমানে স্বেচ্ছায় তিনি নিজ কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। পুত্র শোকে কাতর মা খালেদা এখন কিছুটা সুস্থ রয়েছেন বলে গুলশানের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ছেলের অকাল মৃত্যুর সংবাদ শোনেও চলমান অবরোধ স্থগিত করেননি বেগম জিয়া। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেও তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। এরকম পরিস্থিতিতেও তিনি বিভিন্নভাবে আন্দােলনের খােঁজ খবর নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গুলশানের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার তার কার্যালয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার আগে তিনি মোবাইলে বিভিন্ন শ্রেণীর নেতাদের সঙ্গে যোগোযোগ করতেন। কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে আন্দােলন করতে হবে এই দিক নিদের্শনাও দিতেন তিনি। সেসময় মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ভাইবারেও কথা বলে আন্দােলনের বিভিন্ন পরিকল্পনা জানাতেন তিনি।
কিন্তু গত রোববার থেকে তার কার্যালয়ে ফোন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফলে আন্দােলনের দিক নিদের্শনা দেয়ার কৌশলও পরিবর্তন করেছেন তিনি। যে কোন মূল্যে সরকার পতন নিশ্চিত করতে তিনি বদ্ধপরিকর। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও বিভিন্নপন্থা অবলম্বন করে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
গুলশানের আরেকটি সূত্র জানায়, আত্মগোপনে থাকা দলের সিনিয়র নেতা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদেরকে ভাইবারে নম্বর নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নেটওয়ার্কিং সিস্টেম অচল করে রাখা হলেও বিভিন্ন ডিভাইস এর মাধ্যমে ভাইবার নেটওয়ার্ক সচল করে তিনি আন্দােলনের দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, গুলশান কার্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন কর্মচারিদের মাধ্যমেও তিনি বর্তমানে বিভিন্ন নেতাদের কাছে তার বার্তা পৌছে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে চিরকুট ও অন্য আরেকটি কৌশল অবলম্বন করছেন তিনি। তবে বর্তমানে অনেক সিনিয়র নেতাদেরকে কোনভাবেই না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে লন্ডনের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভাইবারের মাধ্যেম বিভিন্ন শ্রেণীর নেতাদেরকে আন্দােলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তারেক রহমান প্রতিদিন অন্তত ২০জন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন বলে বিশ্বস্থ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও সুশীল সমাজ ও বিএনপি সমর্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপির কোন নেতাকে গ্রেফতার করার পর কে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেবেন সেই দিক নির্দেশনাও আসছে তারেক রহমানের কাছ থেকে।
এদিকে গুলশানের আরেকটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকা মহিলা দলের নেত্রীদের মাধ্যমেও তিনি তার বার্তা বিভিন্ন নেতাদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেন। ছেলেকে হারিয়ে পুত্রশোকে কাতর থাকলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় এখনও ব্যক্ত করছেন বলেও জানিয়েছে একটি সূত্র।