গাবতলী থেকে বালুভর্তি ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাচ্চু মিয়া। পথে পুলিশের সিগন্যাল পেয়ে থামতে হলো। পুলিশ এসে কাগজপত্র দেখতে চাইলো। সঙ্গে কোনো কাগজপত্র ছিল না। পুলিশ বললো, আসো আমাদের সঙ্গে।
বালু ভর্তি ট্রাক চালিয়ে পুলিশের পেছন পেছন বাচ্চু মিয়া এসে থামলেন গুলশানের এক তিনতলা বাড়ির সামনে। রোববার রাত থেকে আছেন সেখানে।
“দুই দিন ধরে কিছু খাই নাই। পুলিশও কোন খাবার দেয় নাই। কখন যে এখান থেকে ছাড়া পামু জানি না”, বললেন বাচ্চু মিয়া।
গুলশান ৮৬ নম্বর রোডের দুই প্রান্তেই সবুজ উদ্যান। রোববার সকাল থেকে পুরো বাংলাদেশের নজর এই রাস্তার দিকে। রাস্তার দুই দিকেই আড়াআড়ি ভাবে পার্ক করা অনেকগুলো ট্রাক। সর্বমোট ১১টি।
ট্রাকের ফাঁকে ফাঁকে পুলিশের গাড়ি। ইউনিফর্মধারী পুলিশ। সাদা পোশাকের পুলিশ। কালো পোশাকের র্যাব।
তিন তলা যে বাড়িটির ভেতর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গতকাল থেকে কার্যত বন্দী হয়ে আছেন, তার সামনে এখনশ খানেক সাংবাদিকের জটলা।
পুলিশের মতো তারাও গতকাল থেকে ক্যাম্প করে আছেন এখানে। ফুটপাথের ওপর কয়েকটি টুল। সেখানে বসে অলস আড্ডায় সময় কাটাচ্ছেন কেউ।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকরা অবশ্য বেশ ব্যস্ত। একটা বাঁশ আর স্টিলের পাইপ দিয়ে একটা প্ল্যাটফর্ম মত বানানো হয়েছে। তার ওপর টেলিভিশন ক্যামেরা। ঘন্টায় ঘন্টায় লাইভ আপডেট যাচ্ছে স্যাটেলাইট টিভিতে।
সমস্যা একটাই। এখানে কোনো দোকানপাট নেই। এরকম মানুষের জটলায় ঝালমুড়ি-চানাচুরওয়ালাদের ভালো ব্যবসা হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশ তাদের ত্রিসীমানায় ঢুকতে দিচ্ছে না।
সিগারেট ফুরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ, সিগারেট কিনতে না পেরে আক্ষেপ করছিলেন একজন সাংবাদিক।
সকালে অবশ্য ভালো নাস্তা করার সুযোগ পেয়েছেন সাংবাদিকরা। নাস্তার প্যাকেট পাঠানো হয়েছে বিএনপির তরফ থেকে। বিএনপি নেত্রীর অফিসের দরোজায় আজ সকালে একটি তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাড়ির গেট পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে দেখি তালাটাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে পুলিশ। বললাম, একটু সরে দাঁড়াবেন, তালাটা দেখতে চাই। কে তালা দিয়েছে, তা পুলিশ বলছে না।
প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক আমাকে জানালেন, পুলিশই এই তালা ঝুলিয়েছে, নিজের চোখে দেখেছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, দুপুরের পর তিনি বাইরে বেরুবেন। কিন্তু তালা খোলার কি ব্যবস্থা হবে, সেই প্রশ্ন অমীমাংসিত।–বিবিসি।