Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

kaysar-largeeeএকাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় পার্টির নেতা হবিগঞ্জের সৈয়দ মুহম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে এই রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

সকাল ১১টা থেকে কায়সারের বিরুদ্ধে আনীত মামলার রায় পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্যের শেষে ৪৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের সারাংশ পড়া শুরু করেন তিনি। বিচারক প্যানেলের অপর ২ সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া।

chardike-ad

রায়ে বলা হয়, সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউসনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর ৭টিতে তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অপর ৭টি অভিযোগে কায়সারকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

কায়সারের বিরুদ্ধে ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে প্রসিকিউশন। ওই ২ মামলা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় তাকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে সকাল ৮টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কায়সারকে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ মঙ্গলবার এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগে দায়ের করা মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ২০ আগস্ট রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

১৬টি ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল আইনে কায়সারের বিরুদ্ধে চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। অবশ্য প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ দাখিল করেছিল। এর পর ৪ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ বিষয়ে প্রসিকিউশন আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।

গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬ কার্যদিবস প্রসিকিউশন এবং ৭ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত আসামিপক্ষ ৭ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করে।

গত ৯ মার্চ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমসহ ৩২ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিপক্ষ কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

গত বছর ১৫ মে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২১ মে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ আগস্ট বিশেষ বিবেচনায় কায়সারকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল-২। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সৈয়দ কায়সারের বাবা সৈয়দ সঈদউদ্দিন ১৯৬২ সালে সিলেট-৭ আসন থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। আর সৈয়দ কায়সার ১৯৭০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫০০ থেকে ৭০০ ‘স্বাধীনতাবিরোধীকে’ নিয়ে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন এই মুসলিম লীগ নেতা। তিনি নিজে ছিলেন ওই বাহিনীর প্রধান। এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফর্ম ছিল।

সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দমন অভিযান চালাতেন। পরে স্বাধীনতার ঠিক আগে তিনি আত্মগোপন করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন কায়সার।

১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং হবিগঞ্জ বিএনপির সভাপতি হন। এরশাদের আমলে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন।