সুন্দরবনের শেলা নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল বিভিন্ন পাত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করার জন্য নিকটবর্তী গ্রামের মানুষ এবং জেলেদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে কাণ্ডারি ১০ থেকে নদীতে স্প্রে করে তেলের কার্যকারিতা নষ্ট করতে অনুমতি দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
স্থানীয় প্রশাসন, বনবিভাগ এবং নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাগুলোর বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত এসেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থানীয় লোকেদের সাহায্যে পুরোনো এই পদ্ধতিতে তেল যতটা সরানো সম্ভব হবে, তারপর বাকি তেলের কার্যকারিতা নষ্ট করতে নদীতে জাহাজ দিয়ে স্প্রে করা হবে। সংগ্রহ করা এই তেল রাষ্ট্রীয় একটি তেল সংস্থা প্রতি লিটার ৩০ টাকা করে কিনবে বলে জানিয়েছেন তারা।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ বলেছেন, “গ্রামবাসী এবং জেলেরা নদী থেকে যে তেল সংগ্রহ করবে, তা রাষ্ট্রীয় কোম্পানী পদ্মা অয়েল প্রতি লিটার ৩০ টাকা করে কিনবে।মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা মাইকিং করেছি এবং মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে।”
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, এরআগেও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে দিয়ে তেল সংগ্রহের পুরোনো পদ্ধতিতে সাফল্য মিলেছে।
এদিকে নদীতে স্প্রে করে তেলের কার্যকারিতা নষ্ট করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাণ্ডারি নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে আছে। কিন্তু স্প্রে করলে ডলফিনসহ জলজ প্রাণির ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা থাকে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অবশেষে পরিবেশ অধিদপ্তর স্প্রে করার অনুমতি দিয়েছে।
এই অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক ড. মো. মল্লিক বলেছেন, স্প্রে করা হলে ক্ষতি হবে না, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন শুক্রবার স্প্রে করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে বাগেরহাটের সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের শেলা নদীর মৃগামারী এলাকায় নোঙরে থাকা তেলবাহী জাহাজ এম. টি সাউদার্ন ওটি-৭ আরেকটি তেলবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়।
প্রায় ৫৪ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটি উদ্ধার করা হয়েছে।
ট্যাংকারটি গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার তেল নিয়ে শেলা নদীতে যাত্রাবিরতি করেছিল।
এই জাহাজ ডুবির ঘটনায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করা হয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে প্রাথমিকভাবে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর এলাকয় তেলবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ঘটনায় সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অনুসন্ধানে জাতিসংঘের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল শিগগিরই বাংলাদেশে আসতে পারে।