রাজধানীর মশা নিধনে গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার কোথাও মশার উৎপাত কমছে না।
নগরবাসী বলছেন, দিন দিন মশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মশার যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। নগরীতে নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না ।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই মশা নিধনের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কাজে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করে উভয় সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বাজেট ৯ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী গড়ে প্রতি মাসে বাজেট দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক নিধনের জন্য ৬৩৮ জন কর্মী, প্রায় ৫০০টি ফগার মেশিন রয়েছে। উভয় করপোরেশনে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মশার ডিম বিনষ্টে লার্ভিসাইডিং এবং বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উড়ন্ত মশক নিধনে ফডিং কার্যক্রম চালানোর কথা। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ এলাকাতেই এ কার্যক্রম চালানো হয় না।
তবে ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে গত ১৯ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত মশা নিধনের জন্য ক্র্যাশ প্রোগ্রামও চালানো হয়। কিন্তু রাজধানীবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাননি বরং দিন দিন মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় সারা বছরই মশার উৎপাত থাকে। এখানকার বিভিন্ন লেক, ডোবা, ঝিল ও বিভিন্ন জলাশয় এবং ড্রেনের দুর্গন্ধময় পানি, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনাসহ নানা কারণে মশার সংখ্যা বংশ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে রাজধানীজুড়েই মশার উৎপাত বেশি। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে মশার যন্ত্রণা অনেক বেশি।
রাজধানীর মহাখালী, গুলশান ১ ও ২, বনানী, বারিধারা, খিলগাঁও, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, সাততলা বস্তি, রামপুরা, বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা, বনশ্রী, টিটিপাড়া, মদিনাবাগ, মাদারটেক, আহাম্মদবাগ, মুগদাপাড়া, গোড়ান, কুড়িল, গাবতলী, পাইকপাড়া, রূপনগর, মিরপুর-১, ২, ১০, ১২ নম্বর, কালশী, পল্লবী, কাফরুল, ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, পুরান ঢাকা, লক্ষ্মীবাজার, সদরঘাট, পল্টন, মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর, কমলাপুর, মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, ওয়াপদা কলোনি, দনিয়া, জুরাইন, সায়েদাবাদ, শাহজাহানপুর, আজিমপুর, লালবাগ ও বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকা, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকাবাসীর মশা নিয়ে অভিযোগের কোনো শেষ নেই।
এসব এলাকায় দিনরাত মশার উপদ্রব সমান। লোকজন জানান, কালেভদ্রে দেখা মেলে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে আসা লোকজনের। এমনকি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও মশার উৎপাত ব্যাপক।
ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটার বাসিন্দা হাজি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মশার জন্য দোকানে কি বাসায় কোথাও থাকা যায় না। এই এলাকায় সিটি করপোরেশনের ওষুধ ছিটানো কর্মীদের কয়েক মাসেও দেখেছি কি না সন্দেহ আছে। অথচ প্রতিবছর মশা মারার জন্য সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করে। এই টাকা কোথায় যায়। খালি কাগজে-কলমে মশা মারার বাজেট। এটা ছাড়া আর কিছু নয়।’
শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী সৈয়দ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় বসবাসকারীদের যন্ত্রণার অন্যতম বিষয় হলো মশা। এটা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর যে পরিমাণ বাজেট হচ্ছে, তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে নগরবাসীকে মশার ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।’
বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান রিপন বলেন, ‘দিন আর রাত নয়, সব সময়ই মশার উৎপাতের মধ্যে আছি। কয়েলেও কাজ হয় না। রাতে মশারি টানালেও মশারির মধ্যে মশা ঢুকে ঘুমের ব্যাঘাত করে।’
মিরপুর-১০ সেনপাড়া পর্বতার বাসিন্দা জামাল আহমেদ বলেন, ‘চার তলায়ও মশার যন্ত্রণার কারণে সন্ধ্যার পরই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে কয়েল জ্বালাতে হয়। এই এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো কর্মীদের কখনো দেখিনি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মাসুদ হাসান বলেন, ‘মশা নিধনে সিটি করপোরেশন তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ খুব শিগগির মশা নিধনে একটা ক্র্যাশ প্রোগ্রামে যাবেন বলে তিনি জানান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মশা নিধনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শীতের এ সময়টায় মশার প্রকোপ একটু বেড়ে যায়। তাই সোমবার থেকে ডিএসসিসি মশা নিধনে আরো জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নগরীর বিভিন্ন ডোবা, খাল এবং লেকে কচুরিপানার কারণে মশার উৎপাত বেশি হয়। তাই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কচুরিপানা অপসারণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। কচুরিপানা অপসারণ করা গেলে মশার উৎপাত কিছুটা কমবে।’
তিনি আরো জানান, মশক নিধনকর্মীদের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কর্মীরা যাতে ফাঁকি দিতে না পারে সেই জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম গঠন করা হয়েছে।’