ভ্রমণে বেরোলে পিঠে ঝোলানো ব্যাগ, পাসপোর্ট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, টাকা-কড়ি, হাঁটা ও ঘোরাঘুরির জন্য সুবিধাজনক জুতা সঙ্গে নেন সবাই। এসবের পাশাপাশি আরো কিছু রয়েছে, যা সত্যিকার ভ্রমণ ইচ্ছুদের অবশ্যই থাকা চাই। নিজের দুর্দশায় হাসার ক্ষমতা না থাকলে ভ্রমণকালের মজা কমে যেতে পারে অনেকটাই। আগে হোক, পরে হোক— পৃথিবী চষে বেড়ানো মানুষদের এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যখন নিজের পরিস্থিতির প্রতিকূলতা থেকে মজা নিতে পারার ক্ষমতাটি ভীষণ কাজে দেয়।
বিমানবন্দরে ব্যাগ খুঁজে না পেয়ে যখন মুখে তোলার অসাধ্য খাবার গলাধঃকরণ করতে হয়, ভিনদেশের সীমান্তরক্ষী অথবা পুলিশ যখন সন্দেহের চোখে তাকায়, স্থানীয় ভাষাটিও জানা নেই; তখন বিপদে মজা পাওয়ার ক্ষমতাটিই সবচেয়ে কাজের। নিয়মিত যারা অদেখাকে দেখতে দূর দেশে ঘুরে বেড়ান, তাদের কিন্তু আরো অনেক ধরনের অদ্ভুত পরিস্থিতির দেখা পেতে হয়। হোমার থেকে মার্ক টোয়েন পর্যন্ত অসংখ্য লেখক ভ্রমণকালীন বিপত্তিকে উপজীব্য করে সেখান থেকেই সৃষ্টির রসদ খুঁজে নিয়েছেন। একালেও মজার মজার নানা ঘটনা ঘটে ভ্রমণকারীদের ঘিরে। কয়েক মাস আগে সুইডেনের কর্মকর্তারা পর্যটকের খোঁজে বড়সড় অনুসন্ধান অভিযানে নেমেছিলেন। তিন জার্মান নারী পর্যটককে খুঁজে পেতে এ অভিযান। রীতিমতো হেলিকপ্টার ও প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে পরিচালিত এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা হয় ৭ ঘণ্টা পর। গভীর জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া যায় যথাক্রমে ৪০, ৫০ ও ৫৬ বছর বয়সী তিন পর্যটককে। তারা জানান, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে বিবসনা হয়ে বনে ঘুরতে গিয়েছিলেন!
বেড়াতে গিয়ে মজার একটি অভিজ্ঞতার কথা নিজের ব্লগে জানিয়েছেন ভ্রমণ-বিষয়ক লেখক ক্যাটি ক্রুগার। তিনি সেনেগালে গিয়েছিলেন স্থানীয় ভাষা শিখে মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়েই। ‘উলুফ’ ভাষায় নিজের একটি নামও রেখেছিলেন ক্যাটি। ‘কুমা নদুর’ নাম থেকেই ক্যাটিকে মনে হবে আদিবাসী সিয়ারার গোত্রের কারো দত্তক সন্তান। সেনেগালে একদিন ক্যাটি গিয়েছিলেন বাদাম কিনতে। স্থানীয় রীতি অনুযায়ী তিনি বিক্রেতার সঙ্গে খাতির জমিয়ে দরকষাকষির চেষ্টা চালান। ক্যাটির সেনেগালিজ নাম শুনেই বাদামওয়ালা মন্তব্য করেন, ‘কী বিচ্ছিরি নাম, তুমি নিশ্চয়ই একটা আস্ত গাধা।’ ক্যাটি তখন দোকানির নাম জেনে নিয়ে বলে ওঠেন, ‘তুমি জুলা, নিশ্চয়ই সারা দিন চাল খাও।’ সিয়ারার ও জুলা গোত্রকে সেনেগালি উপকথায় বলা হয় তুতো গোত্র। কথায় কথায় দোকানির সঙ্গে ক্যাটির বেশ খাতির জমে ওঠে। শেষমেশ তিনি বাদাম কিনেন বাজার-চলতি দামের অর্ধেক দরে।
লন্ডনের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মী অলিভার বিল। ২০০৯ সালে মুম্বাই থেকে লন্ডনে যাওয়ার পথে ভার্জিন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে পরিবেশিত খাবারের মানে তিক্তিবিরক্ত হয়ে তিনি রিচার্ড ব্র্যানসনের কাছে একটি চিঠি লিখেন। সৃজনশীলতার সুবাদে বিলের চিঠি তখন ইন্টারনেটে বেশ ঝড় তোলে। ভার্জিনের ফ্লাইটকে ‘রসনার নরকযাত্রা’ আখ্যায়িত করে বিল লিখেন, ‘খাবারের মোড়ক খুলে মনে হয়েছিল আমি যেন সেই কিশোর, যে বড়দিনের উপহারের বাক্স খুলে সেখানে মরা ইঁদুর দেখতে পেয়েছে। বিল আরো লেখেন, ‘রিচার্ড, এটা তোমার ইঁদুর। এটা নিঃশ্বেষ নিতে পারছে না। খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে আমার এমনই মনে হয়েছিল।’ এ ঘটনার পর ভার্জিন এয়ারলাইনসের মালিক রিচার্ড ব্র্যানসন নিজেই বিলকে টেলিফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাকে ভার্জিনের খাবার পরিবেশন বিভাগে চাকরির প্রস্তাব দেন। বিল সে চাকরি নিয়েছেন কিনা জানা যায়নি। বণিকবার্তা।