রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের বিয়ে হবে আগামীকাল শুক্রবার ।
এ বিয়ের আয়োজন নিয়ে বর-কনের স্বজন এবং কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উৎফুল্ল। বরযাত্রী হবেন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানসহ ছয় মন্ত্রী এবং অর্ধশতাধিক সাংসদ।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামে রেলমন্ত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। বেলা ১১টায় ঢাকার বেইলি রোডের বাসা থেকে রেলমন্ত্রী যাত্রা করবেন। তার পরনে থাকবে মেরুন রঙের শেরওয়ানি।
বরযাত্রীরা চান্দিনার কাছে এসে জুমার নামাজ আদায় করবেন। বেলা ২টায় তারা কনের বাড়িতে পৌঁছাবেন। বাড়ির সামনে তিনটি তোরণ করা হয়েছে। বাড়ির কাছের তোরণে বরকে অভ্যর্থনা জানাবেন কনের বাড়ির শিশুরা।
বিয়ে পড়াবেন স্থানীয় গল্লাই ইউনিয়নের কাজি মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান। কুমিল্লা মহানগরী, চৌদ্দগ্রাম ও ঢাকা মিলে সাত শতাধিক বরযাত্রী যাবেন। কনের বাড়িতে উভয় পক্ষ মিলে দেড় হাজার মানুষের আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কনের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তায় ইটের সলিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বরের বসার মঞ্চ সাজানোর কাজও চলছে। বাড়ির সামনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। চলছে রান্নার আয়োজন। কনের বাড়িতে দূর থেকে লোকজন এসে ভিড় করেছেন কনেকে দেখতে।
কনেপক্ষের বিয়ের আয়োজনের সমন্বয়কারী কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লুৎফুর রেজা খোকন জানান, বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপি আসতে পারেন। দেড় হাজার অতিথি আপ্যায়নে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বিয়ের দেনমোহর এখনো নির্ধারিত হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘দেরিতে বিয়ে করে আমি ডাবল আনন্দ উপভোগ করছি।’ দেনমোহর কত হবে তা জানাননি তিনি। তবে তাৎক্ষণিক দেনমোহর পরিশোধ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আখতার বলেন, ‘রেলমন্ত্রী সারা জীবন মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছেন। ১০ টাকা রোজগার করলেও তা নেতা-কর্মীদের নিয়ে খেয়েছেন। নিজের সুখশান্তির দিকে তাকাননি। দেরিতে হলেও তার বিয়ের সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত।’
বর-পরিচিতি
রেলমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসুয়ারা গ্রামে। ১৯৪৭ সালে ৩১ মে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসুয়ারার এক সম্ভ্রান্ত বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত রজ্জব আলী। মাতা মৃত সোনাবান বিবি। আট ভাই ও এক বোনের মধ্যে মুজিবুল হক সবার ছোট।
উত্তর পদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর মুজিবুল হক কাশিনগর বিএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৬৬ সালে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭০ সালে বিকম পাস করেন। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
কনে-পরিচিতি
কনে হনুফা আক্তার রিক্তা মীরাখোলা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুন্সীবাড়ির মৃত আবদুল হাবিব উল্লাহ মুন্সীর দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। ১৯৮৫ সালের ২০ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চান্দিনা আবেদা নূর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার অধীনে আবেদা নূর উচ্চ মাধ্যমিক বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৬৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ থেকে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন রিক্তা। পরে ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ব্যাচেলর অব ল (এলএলবি) পাস করেন। তার বড় ভাই নাছির উদ্দিন মুন্সী দুবাই প্রবাসী। ছোট ভাই আলাউদ্দিন মুন্সী সম্প্রতি মালদ্বীপ থেকে দেশে এসেছেন।
এদিকে ১৪ নভেম্বর সংসদ ভবনের এলডি হলে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ডিসেম্বর রেলমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের বসুয়ারায় আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সংসদ ভবনের হলে সাড়ে ৩ হাজার এবং চৌদ্দগ্রামের অনুষ্ঠানে ৩০ হাজার মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আয়োজনের সমন্বয়ক করা হয়েছে রেলমন্ত্রীর নিজের ইউনিয়ন শ্রীপুরের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারকে।