Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

PEU RESEARCHঅর্থনৈতিক নানা বিষয়ে ৪৪টি দেশে জনমত জরিপ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিবেদনের দ্বিতীয়টি এ মাসের শুরুতে প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার। প্রতিবেদন দুটি একসঙ্গে দেখলে অপ্রত্যাশিত একটি বিষয় ধরা পড়ে। চমকে ওঠার মতো তথ্যটি হচ্ছে, বিশ্বে মুক্তবাজারের জোরালো সমর্থক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকেই। আরো চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্মুক্ত বাজার ও বাণিজ্যমুখী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। জনমতের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বলতেই হবে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হচ্ছে পুঁজিবাদের স্বর্গ। প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস গতকাল এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ: ক্যাপিটালিস্ট হ্যাভেন’। এই প্রতিবেদনে এশিয়ার চতুর্থ অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান তৃতীয়। তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ভিয়েতনাম।

পিউ রিসার্চের ‘স্প্রিং ২০১৪ গ্লোবাল অ্যাটিচিউট’ শিরোনামে মোট তিনটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এগুলোয় যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত সুবিধা বা ক্ষতি, অসাম্য বিষয়ে প্রচলিত বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা বা হতাশা এবং মুক্তবাজারের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান।

chardike-ad

চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৬৪৩ জনের ওপর চালানো প্রথম জরিপে ৭১ শতাংশ বাংলাদেশী তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। আগামী ১২ মাসে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে, এমন মনোভাব পোষণ করেছিলেন ৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ৭৭ শতাংশ।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘ফেইথ অ্যান্ড স্কেপটিসিজম অ্যাবাউট ট্রেড, ফরেন ইনভেস্ট’ শিরোনামে প্রকাশ হয় পিউ রিসার্চের পরবর্তী জরিপের ফল। সেখানে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বাণিজ্য পরিস্থিতি বিষয়ে উত্তরদাতাদের বিশ্বাস নিয়ে। আর এ মাসে প্রকাশ হয় অসাম্যের পাশাপাশি পুঁজিবাদ ও বাজার বিষয়ে জনগণের মনোভাব নিয়ে।

সর্বশেষ প্রকাশিত ওই জরিপে ৪৪টি দেশের মধ্যে মুক্তবাজারের পক্ষে জোরালো সমর্থক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এ দেশের ৮০ শতাংশ উত্তরদাতাই মুক্তবাজারের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৯৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে শীর্ষে আছে ভিয়েতনাম। মুক্তবাজারের জোরালো সমর্থক পরবর্তী তিন দেশ হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ঘানা।

এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রতি সবচেয়ে বেশি সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। উত্তরদাতাদের বিশ্বাস, বাণিজ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, মজুরি বাড়ায়। ভারতের সংস্কারমুখী ‘টাইগার’ অর্থনীতি নিয়ে যদিও প্রায়ই লেখালেখি হয়, কিন্তু দেশটির (৭২ শতাংশ) তুলনায় মুক্তবাজারের প্রতি সমর্থন ৮ শতাংশ বেশি বাংলাদেশের। এক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ সমর্থন আছে পাকিস্তানে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ৯১ শতাংশ বাংলাদেশী জানান, এটা ‘খুব ভালো’ বা ‘মোটামুটি ভালো’। বিপরীতে ৭৬ শতাংশ ভারতীয় এমনই উত্তর দিয়েছেন। এছাড়া ৭১ শতাংশ বাংলাদেশী বিশ্বাস করেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। এক্ষেত্রে কিছুটা নিরাশাবাদী ভারতীয় (৬৭ শতাংশ) ও পাকিস্তানিরা (৪৮ শতাংশ)।

বাণিজ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ও মজুরি বাড়ায়— এমন ধারণার প্রতি বিশ্বাসে বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে ভারত ও পাকিস্তান। যেসব প্রশ্নে ভারতীয়রা বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে আছেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘নিজ দেশে উন্নততর জীবনের প্রতি আশাবাদ’। এক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশ ভারতীয় দেশে থাকাকেই (বিদেশে কাজ করার বদলে) প্রাধান্য দিয়েছেন। সে তুলনায় ৭১ শতাংশ বাংলাদেশী একই ধারণা পোষণ করেছেন।

যারা দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে কম-বেশি খোঁজখবর রাখেন, তাদের কাছে অবশ্য এ জরিপের ফল স্বাভাবিকই ঠেকবে। গার্মেন্ট শিল্পে রফতানিমুখিতার সুবাদে দুই দশক ধরে লাভবান হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বর্তমানে চীনের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্ট রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সমস্যা থাকলেও এ শিল্পে পাঁচ হাজারের বেশি কারখানায় বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশী কাজ করছেন, যার অধিকাংশই নারী। রফতানিমুখী এ খাত বৈশ্বিক রফতানিতে অবদান রাখছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। মুক্তবাজার নিয়ে বাংলাদেশীদের মনোভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে, দেশটির অর্থনীতিতে মুক্তবাজার ও বাণিজ্য বেশ ইতিবাচক প্রভাব রেখে চলেছে। বিশ্বায়ন নিয়ে যেসব নেতিবাচক গল্প প্রচলিত আছে, সে তুলনায় নিঃসন্দেহে এটি এক ভালো খবর।

পিউ রিসার্চের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি লিখেছেন ফোর্বসের অ্যালিসা আয়ারস। সূত্রঃ বণিকবার্তা।