আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিবাসী গৃহকর্মীরা প্রায়ই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
এসব গৃহকর্মীদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক, যারা মূলত ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল এবং ইথিওপিয়া থেকে এসেছেন।
এদের মধ্যে বহু বাংলাদেশী নারী রয়েছেন, যারা কিনা সেখানে বেতনভাতা, ছুটি কিংবা বিশ্রাম থেকে বঞ্চিত হয়ে দৈনিক ২১ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এসব অভিবাসী গৃহকর্মীদের পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হয়না, উল্টো তাদের উপর চালানো হচ্ছে নানা যৌন উৎপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। জোরপূর্বক তাদের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাফালা নামে পরিচিত বিশেষ ভিসা ব্যবস্থাপনায় গৃহকর্মীদের ওপর দিনের পর দিন নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
দেখুন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও:
টাকাপয়সা খরচ করে নিজেদের ভাগ্য অন্বেষণে যেসব নারীরা বাংলাদেশ থেকে সেখানে যাচ্ছেন, তারা ঠিক কী ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন?
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা একজন গৃহকর্মী সেলিনা বেগম জানান, “সেখানে ভোর ৫টা থেকে কাজ করতে হয় মধ্যরাত অবধি। খাবার-দাবারও ঠিকমত পাওয়া যায়না। অসুস্থ্ হয়ে দেশে ফিরতে চাইলেও দালালরা তাদের মারধরের ভয়ভীতি দেখিয়ে আটকে রাখেন”।
সেলিনা বেগম আরও জানান, তিনি তিনমাস সেখানে কাজ করেছেন, কিন্তু এই তিনমাসের বেতন দালালরা রেখে দিয়েছে।
দালালদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের শাস্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিরাপদ অভিবাসনের কথা বলা হলেও এটি আসলে নিরাপদ নয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ঊনআশি পৃষ্ঠার বৃহস্পতিবারের এই প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তাহীন জীবনের চিত্র।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তা মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলছেন, সেসব গৃহকর্মীদের গালিগালাজ, যৌন নিপীড়নসহ নানা রকমের শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে গৃহকর্মীরা প্রায়ই বেতন পাননা, ছুটি এমনকি পর্যাপ্ত বিশ্রামও তাদের দেয়া হয়না। তাদেরকে দিনে-রাতে ২১ ঘণ্টা পর্যন্তও কাজ করানো হয়।
তাহলে এসব গৃহকর্মীদের রক্ষায় কি করা হচ্ছে?
এ ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের লেবার কাউন্সিলরের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন জানান, নারী গৃহকর্মীদের জন্য আলাদাভাবে লেবার অ্যাটাচি নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু নিয়োগের ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ আসে, কিন্তু তারা এ ধরনের অভিযোগ পেলে সবসময়ই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এ বছর জুন মাসেই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও সদস্যরা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় নির্বাচিত করে।
সে মাসেই দেশটির কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিক ছুটি ও দৈনিক ৮ ঘন্টা বিশ্রামের বিধান রেখে গৃহকর্মীদের চুক্তি সংস্কার করলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছেনা।
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা প্রায় দেড় লক্ষ নারী গৃহকর্মী রয়েছেন। – বিবিসি