টেলিফোন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী হাজার হাজার বাংলাদেশি। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা অনেক বাংলাদেশিকে টেলিফোন করে ডেকে নিয়ে ভিসা বাতিল করে দিচ্ছে। ফলে সবকিছু ফেলে নিঃস্ব হয়ে তাদের দেশে ফিরতে হচ্ছে।
আমিরাত প্রবাসী একাধিক বাংলাদেশি জানান, সরকারি কোনো ঘোষণা ছাড়াই ২-৩ মাস ধরে দেশটির অভিবাসন বিভাগের গোয়েন্দারা অনেক বাংলাদেশিকে টেলিফোন করে ডেকে পাঠায়। ফোন করে পাসপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে উপস্থিত হলে তারা বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকজনের নানা তথ্য জানতে চান। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশি কেউ আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের সাথে জড়িত কিনা।
আরো নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে শেষ পর্যন্ত ভিসা বাতিল করে সপ্তাহখানেক সময়ের মধ্যে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সেখানে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীও এ পরিস্থিতির শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন।
এর মধ্যে ফেনীর বাসিন্দা ও সেখানকার প্রতিষ্ঠিত পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান , মোবাইল ব্যবসায়ী জাফর চোধুরীসহ বহু লোককে এভাবে দেশে পাঠানো হয়েছে। তারা আবু ধাবির মদীনাজায়েদ এলাকায় বাস করতেন।
একাধিক আমিরাত প্রবাসী অভিযোগ করেছেন, যারা দেশে ফেরত যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই বিএনপি সমর্থক। তাদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করার পরই তাদেরকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। অথচ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গৃহকর্মী ছাড়া অন্যান্য শ্রমিকের ভিসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’-এর ভেনু নির্বাচনে ভোটাভুটির পর দেশটির শ্রমবাজারে নতুন করে প্রবেশ, ভিসা জটিলতা নিরসন এবং সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে একাধিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ফলে জটিলতা নিরসনে ২৭ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও বন্দিবিনিময় বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৭ ও ২৮ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও দুবাইয়ের সাংবিধানিক বাদশাহ শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন তিনি। তার সফরকালীন দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নিরাপত্তা ও বন্দিবিনিময় চুক্তি, সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ভিসা চালু, শ্রমিক রপ্তানি চালু এবং সম্পর্কোন্নয়নে জোর দেয়া হবে।
প্রবাসীরা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে সম্পর্ক নতুন গতি পাবে এবং তাদের আতঙ্ক কেটে যাবে। তারা টেলিফোন আতঙ্কের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।