Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

probash-marrige

বিয়ে তো আমরা কতই দেখি কিন্তু টেলিফোনে বিয়ে কয়জনে দেখেছি? এধরনের বিয়ে সাধারণত প্রবাসীদের হয়ে থাকে। আজ আপনাদের তেমনি একটি টেলিফোনে বিয়ের মজার কাহিনী শোনাব।

chardike-ad

অতি সম্প্রতি রিয়াদে একটি টেলিফোনে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বর ছিল সৌদি আরবে আর কনে ছিল বাংলাদেশে। বর আমাদের অফিসের একজন স্টাফ হওয়ায় নিজেও টেলিফোনে বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতায় অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে অংশ নিয়েছি।

সম্প্রতি হঠাৎ করে আামদের শফিক ভাই বিয়ের জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। একান ওকান করে কথা পৌঁছে যায় দেশে তার বাড়ি নবাবগঞ্জেও। শুভ কাজে বিলম্ব করতে নেই এই কথাটা মুরব্বিরা খুব ভাল করেই জানেন। শুরু হলো মেয়ে দেখা। শফিক ভাইয়ের ভাগ্যও বটে, বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হয়নি। অল্প সময়েই ধরা দেয় বিয়ে পাগল শফিক ভাইয়ের স্বপ্নের রাজকুমারী। ফেসবুকের মাধ্যমে আনা হয় কনের ছবি। শফিক ভাই তো ছবি দেখে আনন্দে আটখানা। শফিক ভাইসহ বাড়ির সবাই রাজি।

এবার কনে পক্ষের পালা। কনে পক্ষও ফেসবুকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হবু জামাইয়ের ছবি। ছবি দেখে তাদেরও জামাই পছন্দ হলো। মিয়া বিবি রাজি, ডাকো এবার কাজী।

বিয়ের কথাবার্তা সব পাকাপাকি হয়ে গেলো অল্প সময়ে। একদিন পরেই বিয়ে। যদিও বর-কনে দুই জন দুই দেশে। গায়ে হলুদের কথা এলো। হোক না প্রবাসে টেলিফোনে বিয়ে, তাই বলে কি গায়ে হলুদ বন্ধ থাকবে? প্রশ্নই উঠে না। বিয়ে তো জীবনে একবারই, তবে তা কেন হবে অসম্পূর্ন? অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পেলাম না কাঁচা হলুদ। তাই বাধ্য হয়েই হলুদের গুঁড়ো দিয়েই সারতে হলো কাজটি।

যদিও বোন কিংবা ভাবীদের মায়াবী নরম হাতে শফিক ভাইয়ের গালে-কপালে হলুদ লাগেনি। তবে প্রবাসী সহকর্মী চার দেশের (বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, সৌদি, মিশরী) নাগরিকরা সেই অভাব মেটাতে কোনো কার্পণ্য করেনি। ইন্ডিয়ান, সৌদি, মিশরী অফিস স্টাফদের নিয়ে আমরা খুব আনন্দের সঙ্গেই তার গায়ে হলুদের কাজটি সম্পন্ন করলাম। শফিক ভাইয়ের চেহারায়ও ছিল এক অন্য রমক আনন্দের ছাপ। বিয়ে বলে কথা, চেহারায় আনন্দের ঝিলিক তো থাকতেই হবে। রাত নয়টায় শেষ হলো গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা। রাত পোহালেই বাজবে বিয়ের সানাই। তাই শফিক ভাইকে ঘুমাতে পরামর্শ দিলাম।

আমাদের কথায় যদিও তিনি বিছানায় যান, তবে চোখে ঘুমের লেশও ছিল না। শয়নে স্বপনে শুধুই রাজকুমারীর ছবি চোখে ভেসে ওঠে। হারিয়ে যান হবু জীবন সঙ্গিনীকে নিয়ে ভাবনার জগতে।

অবশেষে রাত পোহালো এলো মহেন্দ্রক্ষন বেজে উঠলো বিয়ের বাদ্য। আজ টেলিফোনে বিয়ে করবেন আমাদের শফিক ভাই। নতুন সাজে সুসজ্জিত করলাম বরকে। একটি দুঃখজনক ব্যাপার হলো, শেষ মুহূর্তে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বরের মাথার মুকুট পাইনি। তাই মুকুট ছাড়াই সাজাতে হয়েছে বরকে। আমরাও সেজেগুজে রওনা হলাম। ছুটে চলছে বরযাত্রীদের গাড়ি। তবে কনে বাড়িতে নয়, পার্টি সেন্টারে। কারণ বিয়েটি হবে টেলিফোনে।

সবাই যখন পার্টি সেন্টারে উপস্থিত হলাম তখন আনন্দের কোনো কমতি ছিল না সেখানে। দেশেও কনে পক্ষ রেডি হয়ে কাজী নিয়ে বসে আছেন। আমরা স্কাইপিতে ভিডিও কলের মাধ্যমে আমাদের সকল আয়োজন তাদের দেখালাম। কনে পক্ষ আমাদের আয়োজন দেখে মুগ্ধ হলেন। কনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে ছিল কনের খালু ও মামা। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, কনে পক্ষের আয়োজনের ভিডিও আমরা দেখতে পারিনি। শুধু অডিও শুনেছি। ইন্টারনেট স্লো হওয়ায় তাদের ভিডিও আমরা দেখতে পারিনি।

স্কাইপিতে সমস্যা করায় অবশেষে মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে কাজী টেলিফোনে বলছিলেন আর আমরা সবাই তা শুনছিলাম। এক পর্যায়ে কাজী সাহেব বললেন বলো কবুল আমাদের শফিক ভাই মুহূর্ত বিলম্ব না করে বলে উঠলেন কবুল। যেন এ কথা বলার জন্য যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বরের কবুল বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলে আনন্দ প্রকাশ করলাম।

হয়ে গেল বিয়ে। দুটিমন ভালোবাসার অটুট বন্ধনে আজীবনের জন্য আবদ্ধ হয়ে গেলো। সারাজীবন টেলিফোন বিয়ের অনেক গল্প শুনলেও আজ তা বাস্তবে দেখলাম এবং কিছু মজার অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। বিয়ে শেষে বরকে সঙ্গে নিয়ে চললো ফটোসেশন এবং গিফট প্রদান পর্ব। সেই সঙ্গে কিছু আনন্দ বিনোদন। অবশেষে কনে ছাড়াই শুধু বরকে নিয়ে আমরা ফিরে এলাম পার্টি সেন্টার থেকে।

কনেও ফিরে গেলো তার নিজ ঘরে। বর-কনে কেউ পেলো না কারো দেখা। শুধু কবুল বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল তাদের বিয়ে। বাসর রাতে কেবলমাত্র মধুর ফোনালাপের মধ্যেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো দুই দেশে অবস্থানরত বর-কনেকে। স্বপ্নের বাসর স্বপ্নই রয়ে গেল। তাতে সমস্যা কি? মানুষতো স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকে। একদিন তো বাস্তব হয়ে ধরা দেবেই তাদের স্বপ্নের বাসর।

সৌদি আরব থেকে, লোকমান বিন নূর হাশেম