বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখন নতুন করে সেখানে ‘অবাঞ্ছিত’ হলেন দেশের নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামের একটি সংগঠন এ ঘোষণা দেয়।
তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক আমেনা মহসিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবির, ‘সাপ্তাহিক’-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এবং আইনজীবী ড. তুহিন মালিককে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদরেকে প্রতিহতের ডাক দেয়।
এই নয়জনের ছবির ওপরে বড় করে লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সুশীল নামধারী এই সব মিথ্যাবাদী স্বাধীনতা-বিরোধী বুদ্ধি বেশ্যাদের প্রতিহত করুন’। তাছাড়া তাদের ছবিতে লালকালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেয়া ছিল।
অবাঞ্ছিত হওয়া প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী ফরহাদ মজহার রেডিও তেহরানকে বলেন, দেশ বিরোধী শক্তি, বিদেশী শক্তির দালালদের এ ধরনের কাণ্ড দেখে আমি হাসছি। কেননা শহীদ মিনার ছিল এ দেশের সেক্যুলারদের প্ল্যাটফর্ম বা প্রতীক। যারা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে একাট্টা। কিন্তু যারা গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের অধিকারের কথা বলে, সংগ্রাম করে তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার মাধ্যমে তারা শহীদ মিনারকেই ফ্যাসিবাদের প্রতীক এবং দিল্লির বেদিতে পরিণত করেছে। দেশের জনগণ এটা মেনে নেবে না।
এ বিষয়ে নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবির রেডিও তেহরানকে বলেন, এটা অত্যন্ত হাস্যকর। কেননা তারা যাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তারা প্রত্যেকেই সরকারের অগণতান্ত্রিকতা, অন্যায় অত্যাচার, সরকারের অবৈধতা, বিরোধীদল ও বিরোধী মতের প্রতি অসহিষ্ণুতাসহ নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ মিনারকে ব্যবহার করে এ ধরনের সংগঠনগুলো অবৈধ সরকারকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে এরা বরাবরই সেইসব ব্যক্তির বদনাম রটানোর চেষ্টা করে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যারা আছে তারা ভুল করছেন উল্লেখ করে নূরুল কবির বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কোনো নাগরিকের শ্রদ্ধা না থেকে পারে না। কেননা তাদের কারণেই দেশটা স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতি বুঝতে পারতেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুঝতে পারতেন তাহলে লুটপাট ও অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন না। তাদের বয়স কম; তারা যখন প্রকৃত অবস্থা বুঝবেন তখন তারা আজকের অবস্থানের জন্য পরিতাপ করবেন।
শুক্রবার সকালে ড. পিয়াস করিমের মরহেদ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে, তাতে আপত্তি জানিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেয় বেশ কয়েকটি সংগঠন। অবস্থান চলাকালে ‘সিপি গ্যাং’ নামের সংগঠনের ব্যানারে উল্লেখিত নয় ব্যক্তিকে ‘স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহতের আহবান জানানো হয়। পাশাপাশি সেখানে মঞ্চ নাটকের মাধ্যমেও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমালোচনা করা হয়। রেডিও তেহরান।