ভোটগ্রহণ পদ্ধতিতে আরো পরিবর্তন আনতে ‘অবাস্তব’ চিন্তা-ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেখানে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের নিরাপত্তা দিতেই হিমশিম খায়, সেখানে এবার অনলাইনে ভোট নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সংস্থাটি।
সূত্র জানিয়েছে, যারা ভোটের সময় নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থান করবেন এবং ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত থাকবেন কেবল তাদেরকেই এ সুযোগ দেওয়া হবে। অনলাইনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে দু’দিন আগেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে ভোটারকে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনের সময় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকেন। যারা প্রতি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হন। এই কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার বাইরে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।এ কারণে তাদের আর ভোট দেওয়া সম্ভব হয় না। বিষয়টি উপলব্ধি পর তাদের ভোট দানের সুবিধার্থেই এ সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে ইসি।
এজন্য সারাদেশের জাতীয় সংসদের তিনশত সাধারণ আসনেই ব্যালট পেপার অনলাইনে দেওয়া থাকবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের জন্য ভোটকেন্দ্র অথবা ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এজন্য আলাদা প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হবে।
এ পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার জন্য আগ্রহী ভোটারদের তিন ভাগে ভাগ করবে ইসি। প্রথমত, তারা যে নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন, তারা সেই এলাকার ভোটার। দ্বিতীয়ত, যে এলাকায় দায়িত্ব পড়েছে তার বাইরে একই জেলার অন্য কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটার। তৃতীয়ত. যে জেলায় দায়িত্বরত তার বাইরে অন্য কোনো জেলার ভোটার হিসেবে গণ্য হবেন তারা। ইতিমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইটি শাখাকে প্রযুক্তিগত দিকটি খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
তবে এ নিয়ে খোদ ইসি কর্মকর্তারাই দ্বিধায় রয়েছেন। পাশাপাশি কিছুটা নাখোশও তাদের একটা অংশ। তারা মনে করছেন, যেখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিতর্কিত হলো কারিগরি ত্রুটির কারণে, সেখানে অনলাইনে ভোটদানের সুযোগ আবারো বড় বিতর্কের মধ্যে ফেলে দেবে ইসিকে। কেননা, এদেশের ভোটারা এখনো প্রযুক্তিবান্ধব নয়। অন্যদিকে, বড় রাজনৈতিক দলগুলোও প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটদানের পরিবর্তে সনাতন পদ্ধিতিতে ভোটদানকেই সমর্থন করে।
এ বিষয়ে ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্ভব করা দুরূহ ব্যাপার। কারণ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির্ও নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। সে হিসেবে প্রায় ১০ লাখ নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এতো লোকের ভোট অনলাইনে নেওয়া সম্ভব হবে না। এছাড়া এতো-এতো লোকের ভোট নিতে দলগুলোর সমর্থনও পাওয়া যাবে না।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ভালো। কিন্তু অনলাইনে ভোটদান কেউ মেনে নেবে না। এটা অবাস্তব এক চিন্তা।