প্রাণঘাতী ভাইরাস ইবোলার সঙ্গে লড়াইয়ে বিশ্ব পেছনে পড়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের ইবোলা মিশনের প্রধান অ্যান্টনি ব্যানবুরি গত মঙ্গলবার এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ইবোলা আক্রান্ত হওয়ার হাজার হাজার নতুন ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দেওয়ার পর এই সতর্কতা উচ্চারণ করলেন মিশন প্রধান। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির।
অ্যান্টনি ব্যানবুরি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘এটা (ইবোলা) আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জোরে দৌড়াচ্ছে। এই দৌড়ে সে-ই জিতে যাচ্ছে। ইবোলা সত্যিই যদি জিতে যায়, তাহলে আমরা জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত বিশ্বসম্প্রদায় খুব শোচনীয়ভাবে হেরে যাব। তাই হয় আমাদের এখনই ইবোলাকে থামাতে হবে, নাহয় এমন একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হব, যার জন্য আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।’
প্রতিদিনই ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে জানিয়ে ব্যানবুরি বলেন, ‘ইবোলা নিয়ে অনেক খারাপ সংবাদ রয়েছে। তবে ভালো খবর হচ্ছে, আমরা এটাকে থামানোর উপায় জানি। তবে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়া থামাতে ইবোলাকে হারাতে হবে। আর তা করতে হবে দ্রুত।’
ব্যানবুরির এ বক্তব্যের আগের দিনই ডব্লিউএইচওর সহকারী মহাপরিচালক ব্রুস এইলওয়ার্ড বলেন, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার নতুন মানুষ ইবোলায় আক্রান্ত হতে পারে।
ডব্লিউএইচও পশ্চিম আফ্রিকায় বর্তমানের ইবোলার প্রকোপকে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির হিসেবে, এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত চার হাজার ৪৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া ও গায়ানা ইবোলায় সবচেয়ে বেশি উপদ্রুত দেশ।
ওবামার ভিডিও কথোপকথন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মঙ্গলবার বলেন, ইবোলার হুমকি মোকাবিলায় সামগ্রিকভাবে বিশ্ব যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গতকাল তাঁর ইবোলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার কথা ছিল। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এতে ওবামা পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রকোপ নিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
আরেক মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের আরেক স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে ইবোলা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর আগে টেক্সাসে নিনা পাম নামের ২৬ বছর বয়সী এক সেবিকার দেহে ইবোলা ভাইরাস ধরা পড়ে। লাইবেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে এসে মারা যাওয়া একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন ওই সেবিকা। নতুন আক্রান্ত সেবিকাও একই রোগীর সেবা করেছিলেন।
ওই সেবিকার সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমগুলোতে বেশ কিছু পাতা খোলা হয়েছে, যেখানো যুক্ত হয়েছেন হাজার হাজার মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী। ‘প্রেসবি স্ট্রং অ্যান্ড প্রাউড’ নামের একটি পাতা খোলার দুদিনের মধ্যেই দেড় হাজারের বেশি ‘লাইক’ পড়েছে। আর ‘নার্সেস ফর নিনা’ নামের পাতায় পড়েছে সাড়ে চার হাজারের বেশি ‘লাইক’।
দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মার্কিন দল: কোথাও ইবোলা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা জানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থানীয় হাসপাতালকে সহায়তা করার উদ্যোগ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দেশটি একটি দ্রুতগামী দল গঠন করতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরিচালক টমাস ফ্রাইডেন মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন। ইবোলা ভাইরাস রুখতে শীর্ষ চিকিৎসকদের একজন তিনি।