আমেরিকায় সূচিত হলো বাংলাদেশী প্রবাসীদের সাফল্যের আরেকটি মাইলফলক। তাদের উদ্যোগ সেখানে যাত্রা শুরু করেছে প্রথম বাংলা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ‘টাইম টেলিভিশন’। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ এই টেলিভিশন স্টেশনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও বার্তার মাধ্যমে টেলিভিশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “একটি কর্তৃত্ববাদী সমাজব্যবস্থায় মতপ্রকাশের জন্য মুক্ত মিডিয়া এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আজ বাংলাদেশে মিডিয়া ও বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে যেখানেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে সেখানে সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা বেশীদুর এগুতে পারেনি। ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ ছাড়া সমাজব্যবস্থা এগুতে পারে না।”
তিনি বলেন, “কটূক্তি করার জন্য যদি কারও সাত বছরের জেল হতে পারে তাহলে মত প্রকাশের সুযোগ কতটা থাকছে আমাদের ভাবতে হবে। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা এখন এমন যে, আজ আমি নিজে ‘সেলফ সেন্সরড’ হয়ে বসে আছি। যা জানি, যা দেখি-শুনি তা বলতে পারি না।”
নিউ ইয়র্ক সময় সন্ধ্যায় কুইন্স কাউন্টির এস্টোরিয়া সিটিতে অবস্তিত ‘এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ডফেয়ার মেরিনা’-তে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনুস সময় স্বল্পতার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় এক ভিডিও বার্তায় ‘টাইম টেলিভিশন’-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং এর সাফল্য কামনা করেন।
ড. মুহম্মদ ইউনূস ওই ভিডিও বার্তায় অনুষ্ঠানে উপস্তিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “টাইম টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় আমি খুব দুঃখিত। তবে আজ আমি খুশী এই ভেবে যে, আজ থেকে নিউইয়র্কে আমাদের নিজেদের কথা বলার একটি নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি হলো।”
মতিউর রহমান চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলেন, “আজ আমার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা আমি আজ নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশী-আমেরিকানদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত প্রথম ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসেছি।”
তিনি বলেন, “এর আগে ১৯৯০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের প্রথম বাংলা প্রিন্ট মিডিয়া সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল।”
টাইম টেলিভিশনের অগ্রযাত্রায় সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আমার এক সময়ের সহকর্মী আবু তাহের টাইম টেলিভিশনকে শুধু বাংলাদেশের সংবাদ ও অনুষ্ঠান নির্ভর না করে, এখানকার মূলধারার সংবাদ ও অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন। আর তা করতে পারলেই টাইম টেলিভিশন নিউ ইয়র্কে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
বাংলাদেশের টক শো পরিচালনায় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে টেলিভিশন টক শো গুলো এখন দলীয় ব্যানার হয়ে গেছে। অথচ টক শো হওয়া উচিত বিবেকের কন্ঠস্বর। গত পরশু বাংলাদেশের একটি চ্যানেলের টক শো অনুষ্ঠানে একজন আলোচকের বেফাস মন্তব্য করে লাইভ অনুষ্ঠান থেকে প্রস্থান করার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আলোচনা করবেন তাদেরকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।”
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্য থাকা স্বত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চলে। আশা করি টাইম টেলিভিশন আমেরিকায় ইতিবাচক বাংলাদেশ তুলে ধরতে সহায়ক হবে।”
অনুষ্ঠানে বর্তমানে নিউ ইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, “বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন শেষ বিকালের সূর্য। শেষ বিকালের সূর্য যেমন দেখতে বড় দেখায় কিন্তু আলোর তেজ কম থাকে, বাংলাদেশের মিডিয়ার অবস্থাও এখন তেমন।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা করবো টাইম টেলিভিশন নিউ ইয়র্কে মধ্যদুপুরের এক প্রখর সূর্য হয়ে ওঠবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দল-মত নির্বিশেষে সকল স্তরের বাংলাভাষী আমেরিকানদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নিউইয়র্ক সিটির বেশ কয়েকজন নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান, এসেম্বলিম্যান ও কাউন্সিল মেম্বার যোগদান করেন। নিউ ইয়র্কের বাংলা মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সম্পাদক সাংবাদিকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তৃতায় নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশনের কর্ণধার আবু তাহের উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “টাইম টেলিভিশন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী আমেরিকানদের একটি পূর্ণাঙ্গ চ্যানেল হয়ে উঠবে। আমরা সকল প্রকার দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধে থাকবো। টাইম টেলিভিশন কখনও কোনো একক গোষ্ঠী, কোনো দল বা কোনো একক রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করবে না। আমরা পুরো কম্যুনিটির দর্পণ হিসেবে কাজ করবো।”
এরপর বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশন পরিবারকে কম্যুনিটি সেবায় অনন্য ভুমিকা রাখার জন্য স্বীকৃতিমূলক ‘প্রোক্লেমেশন’ প্রদান করেন মার্কিন কংগ্রেসে নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচিত মুসলিম কংগ্রেসম্যান হেকিম জাফরী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভারতীয় আমেরিকান ও মূলধারার রাজনীতিবিদ উমা ভারতী, পিপল এন টেক-এর কর্ণধার এবিএম হানিফ, নিউ ইয়র্ক স্টেট এসেম্ব্লিম্যান ল্যুইস সেপ্লোভেদা প্রমুখ।– প্রেস বিজ্ঞপ্তি।