শ্রীলংকান মুসলিমরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির মুসলমানরা এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির লক্ষ্য ও পদ্ধতিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে তাদেরকে ব্যবহার করার জন্য তারা বাইরের শক্তিগুলোকে সুযোগ দেবে না, যদিও দেশটিতে অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা বিরাজ করছে।
নিজেদের পুনর্জাগরণের জন্য আল-কায়েদার প্রচেষ্টা সম্পর্কে তাদের ঘোষণার পর দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে নতুন করে অস্থিরতার ভীতির মধ্যে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা ব্যবহৃত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য শ্রীলংকা অত্যন্ত সতর্কাবস্থায় থাকবে।
শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার রুয়ান ওয়ানিগাসুরিয়া বলেছেন, “শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং সেইসঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত ফিরে আসা প্রতিরোধ করার জন্য ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ কার্যকর রয়েছে৷
“যদিও আল-কায়েদা শ্রীলংকা সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলেনি, কিন্তু এই সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সচেতন, বিশেষ করে এমন একটি দেশ হিসেবে যা বিচ্ছিনতাবাদী সন্ত্রাসবাদ থেকে তিক্ত শিক্ষা পেয়েছে,” বলেছেন ওয়ানিগাসুরিয়া৷
তিনি একটি ভিডিও’র উল্লেখ করেছেন যা ৩ সেপ্টেম্বরে অনলাইনে দেখা গেছে, ভিডিওটিতে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরি ভারত, বাংলাদেশ ও বার্মার মুসলমানদেরকে এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির একটি নতুন শাখায় যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন যার নাম ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদা (একিউআইএস)৷
শ্রীলংকার মুসলমানরা এই ভিডিও’র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তারা ঘোষণা করেছে, সন্ত্রাস ও ধ্বংসের মাধ্যমে কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না৷
শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হাসেন আলী, আস্থা প্রকাশ করেছেন যে কোনো মুসলমান তরুণ সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেবে না, কারণ তা বিপর্যয়কারী ফলাফল বয়ে আনবে।
“আল-কায়েদা শ্রীলংকায় ঘাঁটি গাঁড়া সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন,” বলেছেন আলী, “কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আল-কায়েদার মত একটি সংগঠনের প্রতি মুসলমান তরুণদের কোনো সহানুভূতি নেই, কারণ এই দেশটি ৩০ বছর ধরে একটি যুদ্ধে লড়েছে, আমরা সবাই জানি যে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে কখনোই কোনো সমাধান পাওয়া যায় না”৷
মুসলমানদের নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলোর একটি যৌথ সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলংকা (এম সি এস এল)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিলমি আহমদ উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন যে আল-কায়েদার ঘোষিত পদক্ষেপ “এই সমগ্র অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল” করে তুলতে পারে৷
“মুসলিম কাউন্সিল আস্থাশীল যে শ্রীলংকার মুসলমানরা বাইরের শক্তিগুলোর শিকারে পরিণত হবে না যারা চরমপন্থী বৌদ্ধ শক্তিগুলোর দ্বারা অসহায় পরিস্থিতির শিকার হওয়া মুসলমানদেরকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে,” বলেছেন আহমদ।
“মুসলমান ধর্মীয় ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ সব সময়ই সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন, এবং জুমার খুতবাগুলোতে মুসলমানদেরকে অব্যাহতভাবে পরামর্শ দেয়া হয় যাতে তারা সেই সব শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার থাকে যারা শ্রীলংকার মুসলমানদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে”৷
শ্রীলংকার মুসলমানরা বাইরের শক্তিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করছে বলে বদু বালা সেনা (বিবিএস)-এর মত চরমপন্থী বৌদ্ধ সংগঠনগুলো যে অভিযোগ করে তা আহমদ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
“এমনকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সচিব অনেকবার ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর শ্রীলংকায় কার্যক্রম পরিচালনা করার কোনো প্রমাণ তারা পাননি, কিন্তু তারা অব্যাহতভাবে সতর্ক করে যাচ্ছেন যে বাইরের শক্তিগুলোর কাছ থেকে সব সময়ই হুমকি আসতে পারে,” বলেছেন তিনি, সেইসঙ্গে আরো যোগ করেছেন যে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা মুসলমানদেরকে বাড়তি নিরীক্ষণের কোনো কারণ তিনি দেখছেন না।–ওয়েবসাইট।