ভারতের সদ্য শেষ হওয়া উপনির্বাচনে হিন্দুত্বে সওয়ার হয়েছিল তার দল ও সঙ্ঘ পরিবার। কিন্তু তিনি নিজে যে ‘মুসলিমবিরোধী’ নন, মার্কিন সফরের আগে সে দেশের চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেই বার্তাটিই দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
উপনির্বাচনে খারাপ ফলের ধাক্কায় হারিয়ে যেতে বসা তার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রটি ফের জাগিয়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী চান সংখ্যালঘুদের জন্য কেন্দ্র যে সব পদক্ষেপ করছে, তা আরো বেশি করে প্রকাশ্যে আসুক। তা হলেই স্পষ্ট বার্তা দেয়া যাবে যে, মোদি সরকার কোনোভাবেই সংখ্যালঘুবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে না। বরং লোকসভা ভোটের প্রচারে ‘কাউকে তোষণ নয়, উন্নয়ন সবার জন্য’ বলে মোদি যে স্লোগান তুলেছিলেন, সেই অবস্থানে তিনি এখনো অনড়।
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা বলেন, “বিজেপি ভোটে জেতার পর অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়টিই রাখবেন না। সেটি যেমন অপপ্রচার ছিল, তেমনই আজও যেভাবে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে মুসলিম-বিরোধী বলে প্রচার করছে, সেটিও হাস্যকর। সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে দিনরাত কাজ করে চলেছে আমাদের মন্ত্রণালয়।”
মনমোহন সিংহের জমানায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য ১৫ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ১১টি মন্ত্রণালয়ের ২৪টি প্রকল্পের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ সংখ্যালঘুদের জন্য রাখা হয়েছিল।
কিন্তু মোদি সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রনালয় সূত্রের দাবি, ওই সব প্রকল্পে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের বদলে তাদের তোষণের রাজনীতিই প্রাধান্য পেয়েছিল। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই সব প্রকল্প বন্ধ তো করাই হয়ইনি, উল্টে নতুন আরও একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা জানান, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে সংখ্যালঘু উন্নয়নে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩,৭১১ কোটি টাকা। ১,১৩০ কোটি টাকা (ইউপিএ ও এনডিএ জমানা মিলিয়ে) ইতিমধ্যেই অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। যার সিংহভাগ ৯৫০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে মোদি সরকার আসার পর, গত তিন মাসে।
মন্ত্রণালয় এ-ও জানিয়েছে, মোদির জন-ধন প্রকল্পের মাধ্যমে সবার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, যাতে দেশের ৭১০টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লক ও ৬৬টি শহর বেছে নিয়ে বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে গেলে বৃত্তির টাকা থেকে সুদ মকুবের মতো যাবতীয় সুবিধা সরাসরি সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে। ওয়াকফ বিল সংসদে পাস হলে ফি-বছর ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসবে, যার মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন বেশি করে ঢেলে সাজা যাবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, সাম্প্রতিক উপনির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে, উন্নয়ন ছেড়ে হিন্দুত্বে সওয়ার হওয়ার রাজনীতি ব্যুমেরাং হবে। বিশেষত গো-বলয়ে হিন্দুত্ব করলে সংখ্যালঘুরা বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হবেন।
হিন্দুরাও একজোট হয়ে বিজেপির পাশে দাঁড়াবেন না। কারণ, উদারমনস্করা কট্টর হিন্দুত্ব পছন্দ করেন না। সে জন্যই লোকসভার প্রচার থেকে মোদি শুধু উন্নয়নকেই হাতিয়ার করে এসেছেন। এক দিকে তিনি সবার জন্য উন্নয়নের কর্মসূচি পালন করতে চাইছেন, অন্য দিকে ভবিষ্যতের জন্য অটুট রাখতে চাইছেন বিজেপির ভোটব্যাংককেও।–সূত্র আনন্দবাজার।