ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা মৌলবাদী দুষ্কৃতীরা যাতে আশ্রয়-প্রশ্রয় না-পায়, সে ব্যাপারে সব রকম ব্যবস্থা নেবে নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে ঢাকার উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলিকে প্রতিশ্রুতি দিলো নয়াদিল্লি। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বাংলা টেলিগ্রাফের পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো।
তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামির যোগাযোগ রয়েছে এবং তাঁর ব্যবস্থাপনায় সীমান্ত পেরিয়ে জামায়াতের হাতে কোটি কোটি টাকা পৌঁছেছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি গত দুই-আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের মৌলবাদী দুষ্কৃতীরা এ দেশে ঢুকে রাজ্যের শাসক দলের একাংশের আশ্রয়ে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
মাহমুদ আলি বলেন, দুদেশের নিরাপত্তার পক্ষেই এই বিষয়টি বিপজ্জনক। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু তথ্যও দিয়েছেন ঢাকার প্রতিনিধিরা।
তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিষয়টিকে প্রকাশ্যে তুলে ধরতে চাইছে না দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেন, ‘কূটনৈতিক আলোচনার পরিসরে এই বিষয়টি উঠে আসেনি।’
কিন্তু সরকারি ভাবে আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের উদ্বেগের এই বিষয়টি রাখা না-হলেও, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় নিরাপত্তা অফিসারদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে নিয়মিত খবরাখবর রাখা হয়।
তৃণমূল-জামায়াত যোগাযোগের বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করেছেন বলেই কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গেও পৃথক ভাবে বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। সেখানেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
তিন দিনের সফর শেষে গতকাল শনিবার রাতেই নিউইয়র্ক রওয়ানা হয়েছেন মাহমুদ আলী। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকের পর দফায় দফায় সাংবাদিক বৈঠক করেছেন দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। প্রকাশিত হয়েছে যৌথ বিবৃতিও। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য, পরমাণু ক্ষেত্র, মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, রেল ও বাস যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাকে অনুরোধ করছি, ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির জন্য সে দেশে কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হোক। আনন্দের বিষয়, ভারতীয় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির জন্য আজ ১৬টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার ঘোষণা করেছে ঢাকা।
আকবরুদ্দিন আরও জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে। দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলিও উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ভারত এখানে তাদের গাড়ির কারখানা তৈরি করলে, আমরাও তার পাশে যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গড়তে পারি। বাড়বে কর্মসংস্থান।
পাশাপাশি ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’-এর এসি কোচ বাড়ানো, সপ্তাহে দুদিনের পরিবর্তে তা তিন দিন চালানো, ঢাকা-শিলং বাস পরিষেবা শুরু করার মতো বিষয়গুলিও গুরুত্ব পেয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারত জানিয়েছে, এ ব্যাপারে কেন্দ্র আন্তরিক। খুব শীঘ্রই এই চুক্তি দুটি রূপায়ণের লক্ষ্যে দেশের ভিতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।