মন্ত্রিসভায় শিগগরিই পরিবর্তন আসছে। এ নিয়ে সরকারি দলের ভেতরে-বাইরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ঈদুল আজহার পরে যেকোনো সময় এ রদবদল হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের কারো কারো দফতর পরিবর্তন এবং দুয়েকজন বিতর্কিত মন্ত্রিকে বাদ দিয়ে নতুন করে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। কোনো কোনো সাবেক মন্ত্রিকে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে। মন্ত্রিসভার কলেবরও বাড়তে পারে। আবার সরকারের শরিক জাতীয় পার্টি সরকারে থাকা না থাকার সিদ্ধান্তের ওপরও মন্ত্রিসভার পরিবর্তন ও কলেবর নির্ভর করবে বলে জানা গেছে।
নতুন করে মন্ত্রিসভায় যারা স্থান পেতে পারেন তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল আলম হানিফের নামও।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় তার মন্ত্রিসভায় রদবদল বা পরিবর্তন আনতে পারেন। সরকারের প্রথম ছয় মাসের মাথায় এমন একটি পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যায়। সম্প্রতি পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং স্বরাষ্ট্রসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাজের সমালোচনার কারণে বিষয়টি সরকারের ভেতরে-বাইরে আরো জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বিশেষ করে সরকারের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকার বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকায় মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে আলোচনা জোরদার হয়েছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, ডা: দীপু মনি ইতোমধ্যেই গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের স্থলাভিষিক্ত করা হতে পারে। আর মোহম্মদ নাসিমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। তবে বিষয়টি নাসিমের সম্মতির ওপরই নির্ভর করছে বলে সূত্র জানায়।এর আগে ডা: দীপু মনিকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রির দায়িত্বে নিয়োগের গুঞ্জন ছিল। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডা: দীপু মনির পছন্দের স্থান হলেও আপাতত সে সম্ভাবনা নেই বলে তাকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
আর সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে একজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে দিনাজপুরের সন্তান খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় তার নাম আলোচনায় এলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে রাখা হয়নি। তবে দলে সক্রিয়, ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন এ নেতা এবার আর বাদ যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে সৃষ্ট ‘দূরত্ব’ ঘুচিয়ে এখন বেশ কাছাকাছি অবস্থান করায় মাহবুব-উল আলম হানিফের নামও রয়েছে আলোচনায়।
বিশেষ করে গত মাসে মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচিতে অনেকটাই এককভাবে মাঠে থেকে নেত্রীর আরো কাছাকাছি চলে আসেন তিনি। এ ছাড়া দলে প্রায় ‘নিষ্ক্রিয়’ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অনুপস্থিতিতেও সাংগঠনিক কাজে ভূমিকা রেখে চলেছেন হানিফ।
আলোচনায় গত সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম থাকলেও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তাদের ফেরার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ উল আলম লেনিন বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদল একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব এখতিয়ার। তিনি যেকোনো সময় চাইলে তার মন্ত্রিসভায় রদবদল অথবা কলেবর বৃদ্ধি করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো আমি কিছু জানি না।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আর আমি এসব নিয়ে ভাবছিও না। দলের দায়িত্বে আছি এবং সেটি নিয়েই পুরোপুরি ব্যস্ত আছি। এটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই ভালো জানেন। তিনি যখন প্রয়োজন মনে করেন তখনই রদবদল করতে পারেন।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি এমপি বলেন, গত সরকারের মন্ত্রি থাকা অবস্থায় দলের জন্য তেমন কোনো কাজ করতে পারিনি। তাই দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে আমি দলে ফিরে এসেছি। এখন দলে সময় দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে প্রধানমন্ত্রী আমাকে যখন যেখানে দায়িত্ব দেবেন আমি তা পালনের জন্য সব সময় প্রস্তুত।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, মন্ত্রি বা এমপি হওয়ার জন্য রাজনীতি করিনি। কেবল বঙ্গবন্ধু ও তার দলকে ভালোবেসে রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা মাথা পেতে নিয়ে যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।