বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ৭০০ কোটি ডলার অর্থায়নে ৪২টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পের ক্রয়সংক্রান্ত অনিয়ম এবং টাকা ব্যবহার করতে না পারায় চলমান পাঁচ প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের ক্রয় কাজে যতটুকু অনিয়ম ধরা পড়েছে সেই পরিমাণ টাকা তুলে নিচ্ছে সংস্থাটি। আগের তুলনায় প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত যাওয়ার হার বেড়েছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে ইআরডি থেকে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে তাদের অর্থায়িত প্রকল্পের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। যেসব প্রকল্পে তারা অর্থায়ন করে থাকে সেগুলোকে কঠোরভাবে অডিট করছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলের পর্যবেণে প্রকল্প পাঁচটিতে কেনাকাটায় অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রকল্পে যতটুকু অনিয়ম ধরা পড়ে সেই পরিমাণ টাকা বিশ্বব্যাংকে ফেরত যাচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর অধীনে বাস্তবায়নাধীন এভিয়ান ইনফুয়েঞ্জা প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপনস প্রকল্পে আবারো কেনাকাটায় অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর আগে প্রকল্পে দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকা অনিয়ম ধরা পড়েছিল। নতুন করে ক্রয়প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ধরা পড়ায় এবার মন্ত্রণালয় ছয় লাখ ৫৫ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছে বিশ্বব্যাংকে। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত কমিটির মতে প্রকল্পে কম্পিউটার ক্রয়ের েেত্র অনিয়ম ধরা পড়েছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, কেনাকাটায় অনিয়মের কারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইন্যাবল এনভায়রনমেন্ট প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়মের কারণে দুই হাজার ৩০০ টাকা বিশ্বব্যাংকে ফেরত দিচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া ‘ প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু’ প্রকল্পেও অনিয়মের কারণে ১৬ হাজার ডলার বা ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ফেরত যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সময় বৃদ্ধি ও প্রকল্পের টাকা খরচে অসামঞ্জস্যের কারণে ‘ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য সেবা প্রদান কার্যক্রম’ প্রকল্পের অবস্থা এখন বেহাল। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের (পথশিশু, শিশুশ্রমিক ও এতিম) ঝুঁকি নিরসনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে সাতটি ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড প্রটেকশন সার্ভিস (আইসিপিএস) সেন্টারের মাধ্যমে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ সেন্টার চালু করার ল্েয বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে ২০০৯ সালের জুন থেকে প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ৮৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ধরা হয়। এর মধ্যে সরকারি খাত থেকে ৩৮ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৮৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০০৯ সালের জুন থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ বাড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য বরাদ্দ ১৪ কোটি টাকা সরিয়ে নেবে বিশ্বব্যাংক।
১০ কোটি ২২ লাখ ডলারের ‘ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ বিগত ছয় বছরে ছাড় হয়েছে মাত্র তিন কোটি ৮৮ লাখ ডলার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কেনাকাটা ও দরপত্রজনিত অনিয়মের কারণে প্রকল্প থেকে চার লাখ ১১ হাজার টাকা ফেরত যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকে। ‘এম্পলয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ শীর্ষক প্রকল্প থেকেও ১৭ হাজার টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে বিশ্বব্যাংকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পে প্রকিউরমেন্টের েেত্র যেটুকু অয়িম হয় সেই পরিমাণ টাকা বিশ্বব্যাংকে ফেরত দিতে হয়। সম্প্রতি কিছু প্রকল্পে মিসপ্রকিউরমেন্ট হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জানান, এ ব্যাপারে ইআরডির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে যাদের অনিয়মের কারণে এসব হয়েছে তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।