২০৩৬ সাল নাগাদ প্রতি একজন বয়স্ক কোরিয়ান নাগরিকের বিপরীতে কর্মক্ষম মানুষ থাকবেন গড়ে দুইজন। ওইসিডি’র (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কোঅপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক সংগঠনটির সদস্য দেশসমূহে কর্মক্ষম নবীন আর অক্ষম প্রবীণদের অনুপাত কেমন আছে তা একটি নিয়মিত সমীক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ওইসিডি’র সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনটি বলছে ২০৩৬ সালে দক্ষিন কোরিয়ায় কোনপ্রকার আয়-রোজগার করেন না এমন একজন বয়স্ক নাগরিকের দেখাশোনার জন্য গড়ে ১.৯৬ জন অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় কর্মক্ষম মানুষ থাকবেন। গবেষণা বলছে সেবারই প্রথমবারের মতো দেশটিতে এই অনুপাত দুইয়ের নীচে নেমে যাবে যা কিনা ১৯৫০ সালে ছিল ১৫.৭৯, ১৯৯৭ সালে ৯.৮৩ এবং বর্তমানে রয়েছে ৫.২৬।
ওইসিডিভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকো এবং তুরস্কের অবস্থা কোরিয়ার চেয়ে ভালো। দেশদুটিতে সক্ষম-অক্ষমের বর্তমান অনুপাত যথাক্রমে ৮.৪৯ ও ৫.৭৯। প্রবীণ জনসংখ্যা এখনই বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে জাপানে যেখানে আলোচ্য অনুপাতটা ২.১৯। জাপানের পরের অবস্থানগুলোতে আছে জার্মানি (২.৮৫), সুইডেন (২.৯৩) ও ফিনল্যান্ড (২.৯৪)।
দুই দশক পরের তুলনামূলক চিত্র বলছে সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটা তখনও জাপানেরই থাকবে, একজন কর্মহীন জাপানীর বিপরীতে কর্মক্ষম থাকবেন ১.৫৬ জন। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর চাপে নুয়ে পড়াদের তালিকায় ’৩৬ সালেও দু’ নম্বরে থাকবে জার্মানি ১.৬৪ অনুপাত নিয়ে। পরের দুটো স্থানে থাকার কথা ইটালি (১.৭৪) এবং নেদারল্যান্ডসের (১.৯৩)।
বলা বাহুল্য, গবেষণার তথ্য কোরিয়ান জনগোষ্ঠীর দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার বার্তাই দিচ্ছে। এর কিছু প্রভাব কি এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে না? সরকারি অবসর ভাতার তহবিল শুন্য হয়ে পড়ছে, মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
অস্বাভাবিক নিম্ন জন্মহার (দুই শতাংশেরও কম) ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জটাকে আরও কঠিন করে তুলছে। কেমন পরিবার চান- এমন প্রশ্নের জবাবে অবিবাহিত কিংবা নববিবাহিত বেশীরভাগ কর্মজীবী কোরিয়ান নারী বলছেন একটি সন্তানই যথেষ্ট।
গবেষণায় বয়স্কদের সামাজিক নিরাপত্তার জায়গাটিতেও কোরিয়ান সমাজের দৈন্য চিত্রই ফুটে উঠেছে। সত্তর ছুঁই ছুঁই অনেক বৃদ্ধকেই বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করে খেতে হচ্ছে। বয়স্কদের দেখাশোনার বিষয়টি অনেক পরিবারে ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, অনিবার্যভাবেই যা পারিবারিক কলহের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।