ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে বিবেচিত ক্রিকেট বিশ্ব ক্রীড়া সম্মেলনগুলোতে বরাবরই ছিল উপেক্ষিত। প্রথম এবং অদ্যবধি শেষবারের মতো ক্রিকেট অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯০০ সালে। সেবার চারটি দল নিয়ে খেলাটির অ্যাথেন্স অলিম্পিকে অভিষিক্ত হওয়ার কথা থাকলেও টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই নাম প্রত্যাহার করে নেয় নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম। অগত্যা গ্রেট ব্রিটেন আর ফ্রান্সের দুটি দলের মধ্যে (জাতীয় দল নয়) একটিমাত্র ম্যাচ দিয়েই পদকজয়ী নির্ধারণ করা হয়। ১৫৮ রানের ব্যবধানে ফ্রেঞ্চ অ্যাথলেটিক ক্লাব ইউনিয়নকে হারিয়ে সোনা জেতে গ্রেট ব্রিটেনের ডেভন এন্ড সমারসেট ওয়ান্ডারার্স।
এর প্রায় একশ বছর পর ১৯৯৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট ইভেন্ট যুক্ত হয়। কমনওয়েলথেও রাজকীয় খেলাটির সেটাই প্রথম ও শেষ প্রবেশ। মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরে সে আসরের ফাইনালে সোনাজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ উইকেটে হেরেছিল রূপা জেতা অস্ট্রেলিয়া। ব্রোঞ্জ জিতেছিল নিউজিল্যান্ড।
তারও একযুগ বাদে ক্রিকেটের গোড়াপত্তন ঘটে এশিয়ান গেমসে। দুই ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট কর্তারা জোর তৎপরতা চালিয়ে পুরুষদের পাশাপাশি প্রমীলাদের জন্যেও একটা ইভেন্ট আদায় করে নেন। তবে এশিয়াডে খেলাটি অন্তর্ভুক্ত করায় জোরাল ভূমিকা রাখলেও খোদ ভারতই প্রথম আসরটিতে অংশ নেয় নি ‘ব্যস্ত’ সূচির অজুহাত দেখিয়ে। চীনের গুয়াংঝুতে পাকিস্থান, শ্রীলংকাসহ ৯ জাতির পুরুষ ইভেন্টটিতে সোনা জিতে নেয় বাংলাদেশ, রৌপ্যজয়ী আফগানিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে। আর ৮ জাতির প্রমীলা ইভেন্টে সোনা জেতে পাকিস্তান। ফাইনালে ১০ উইকেটে হেরে রূপো নিয়ে দেশে ফেরেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
অলিম্পিক আর কমনওয়েলথে ক্রিকেটের অস্তিত্ব এক আসরের বেশী স্থায়ী না হলেও এশিয়ান গেমসে দ্বিতীয়বারের মতো অন্তর্ভুক্ত থাকছে ব্যাট-বলের লড়াই। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে এশীয় ক্রীড়ার সর্বোচ্চ আসরটির সপ্তদশ সংস্করণে গেলোবারের মতোই টি টোয়েন্টির আদলে পরিচালিত হবে ম্যাচগুলি। পুরুষ ও প্রমীলা দুটো ইভেন্টই চলবে নবনির্মিত ইওনহুই ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ২ হাজার ৩ শ ৫৩ জন দর্শক ধারন ক্ষমতার গ্যালারীসহ দক্ষিন কোরিয়ার প্রথম ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির সামগ্রিক নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। মাঠ সম্পর্কে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হকের মূল্যায়ন, “ইনচন অনেক এগিয়ে, চার বছর আগের গুয়াংঝু থেকেও।” কোরিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ও এসিসির ব্যবস্থাপনায় স্টেডিয়ামটি বানাতে খরচ হয়েছে ৫ বিলিয়ন কোরিয়ান উওন। নির্মিত স্টেডিয়ামে অনুশীলনের জন্য দুটি মাঠ থাকবে। আউটফিল্ড তৈরি করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত জয়শিয়া ঘাস দিয়ে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার ( আই সি সি) পূর্ণ সদস্য দেশসহ অংশগ্রহণ করবে বেশ ক’টি সহযোগী দেশও। পুরুষ ও মহিলা দুই বিভাগেই ১০ টি করে দল অংশ নেবে। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেখড়ি হবে দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষ ও মহিলা উভয় দলের।
পুরুষ বিভাগের দলগুলো হচ্ছেঃ স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশ, চীন, হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া ,নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। মহিলা বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেঃ দক্ষিণ কোরিয়া, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, হংকং, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। গতবারের মতো এবারও ‘ব্যস্ততা’র অজুহাতে এশিয়াড ক্রিকেট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং অলিম্পিক গেমসের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম খেলাধুলার আসর এশিয়ান গেমসের ২০১৪ সংস্করণের পর্দা উঠবে ১৯ সেপ্টেম্বর। ৩৬টি ইভেন্টে ৪৫টি দেশের ৪৩৯ জন প্রতিযোগী অংশ নেবেন। ১৩ দিনের মহাযজ্ঞের সমাপ্তি ঘটবে ৪ঠা অক্টোবর।