ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে পর্যটকদের ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হিমালয় অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

chardike-ad

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি জনপ্রিয় পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পহেলগ্রামে ওই হামলা চালানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, পর্যটকদের ভিড় আবারও বেড়েছে।

তিনটি পৃথক নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা যথাক্রমে ২০, ২৪ ও ২৬। তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন।

‘আমাদের সামনেই গুলি ছোড়া হয়েছে,’ ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। ‘প্রথমে মনে হয়েছিল কেউ আতশবাজি ফাটাচ্ছে। কিন্তু যখন চারপাশ থেকে চিৎকার শুনলাম, তখনই বুঝে ফেলি কী ঘটছে। আমরা দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচাই।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘চার কিলোমিটার পর্যন্ত থামিনি… এখনো কাঁপছি।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রাস্তার ধারে একটি তৃণভূমিতে এ হামলা চালানো হয়। এতে দুই বা তিনজন জঙ্গি অংশ নিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন জনৈক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি, তাই আমি বিস্তারিত বলছি না। তবে এটুকু স্পষ্ট, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যত হামলা হয়েছে, তার মধ্যে এটি অনেক বড়।’

নিহতদের জাতীয়তা এখনও জানা যায়নি।

‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামক একটি স্বল্পপরিচিত জঙ্গি সংগঠন এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, ৮৫ হাজারের বেশি ‘বহিরাগত’ জম্মু ও কাশ্মীরে বসতি স্থাপন করেছে, যা ‘জনসংখ্যাগত পরিবর্তন’ ঘটাচ্ছে।

তাদের ভাষ্য, ‘ফলস্বরূপ, অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো হবে।’

রয়টার্স স্বাধীনভাবে এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

জম্মু ও কাশ্মীরের আঞ্চলিক সরকার রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছে, গত দুই বছরে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা প্রায় ৮৪ হাজার অ-স্থানীয়কে জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এ নৃশংস ঘটনার পেছনে যারা আছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংকল্প দৃঢ় এবং তা আরও জোরদার হবে…।’

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, তিনি জরুরি নিরাপত্তা সভায় যোগ দিতে কাশ্মীরে যাচ্ছেন।

হিমালয়ের এ অঞ্চলটি পুরোপুরি ভারত নিজেদের দাবি করলেও বাস্তবে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৮৯ সালে ভারতবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকেই অঞ্চলটি জঙ্গি সহিংসতার ঝুঁকিতে আছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা কমেছে।

২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে—জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ। এ পরিবর্তনের ফলে বহিরাগতদের বসবাস ও জমি কেনার সুযোগ তৈরি হয়।

এ সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ দুটি পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও সংঘাতের অন্যতম উৎস।

কাশ্মীরে পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা বর্তমানে প্রায় বিরল। সর্বশেষ প্রাণঘাতী হামলাটি হয় ২০২৪ সালের জুনে। সে সময় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাস জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে নয়জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হন।

ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, অতীতে অনেক বড় জঙ্গি হামলা ঘটে বিদেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভারত সফরের সময়, যাতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কাশ্মীরের দিকে আকৃষ্ট করা যায়।

মঙ্গলবারের হামলাটি ঘটে ঠিক এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতে চার দিনের একটি সফর শুরু করেছেন।