আপনি কী আপনার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সহকারীর সঙ্গে খুব সুন্দর করে, ভদ্রভাবে কথা বলেন? এ ভদ্র ব্যবহার কিন্তু কোটি কোটি ডলারের খরচ ডেকে আনতে পারে। যা ‘চ্যাটজিপিটি’ এর ক্ষেত্রে ঘটছে।
ওপেন এআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান এটি নিয়ে একটি চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে ‘প্লিজ’ বা ‘থ্যাঙ্ক ইউ’-এর মতো সৌজন্যমূলক আচরণ কোম্পানির অপারেশনাল খরচের খাতায় কয়েক মিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী অল্টম্যানকে জিজ্ঞেস করেন, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলার কারণে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়?
এ প্রশ্নের জবাবে অল্টম্যান লিখেছেন, “এর পেছনে প্রায় কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে, যা আপনার ধারণার বাইরে!”
বিষয়টি শুনলে মনে হবে, মানুষের ওপর সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ‘২০০১: এ স্পেস ওডেসি’-এর প্রভাব পড়েছে। সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে ছিল, এআই সিস্টেম ‘হাল’-এর সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করায় ব্যবহারকারীদের সে বিপদে ফেলে দিয়েছিল। এর জন্যই হয়ত মানুষ সাবধান হয়ে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে!
তাছাড়া বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আপনি যদি ভদ্রভাবে প্রশ্ন করেন তাহলে এআই-ও তুলনামূলকভাবে ভদ্র ও ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়।
তবে ‘কয়েক মিলিয়ন’ কথাটা হয়ত ঠাট্টার ছলেই বলেছেন অল্টম্যান। কিন্তু এর পেছনের বাস্তবতা হলো, চ্যাটজিপিটিকে আপনি যে বার্তাই পাঠান না কেন, তা যতই তুচ্ছ হোক, সে কিন্তু আপনাকে রিয়েল টাইমে একটি পূর্ণ জবাব দিবে। আর সেটা তৈরি করতে গিয়ে তাকে ব্যবহার করতে হয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং সিস্টেম, যার বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
সোজা কথায়, ভদ্রতায় যেমন মিষ্টি ফল মেলে, তেমনি এআই-এর ক্ষেত্রেও তার খরচটা একেবারে মজার বিষয় না—প্রযুক্তির জগতে এটাই বাস্তবতা।
এআই মডেলগুলো চালানোর জন্য বিশাল পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন হয়, যা মূলত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ডেটা সেন্টারগুলোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এই ডেটা সেন্টারগুলো বিশ্বব্যাপী মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ২ শতাংশের জন্য দায়ী।
বিনিয়োগ ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাক্সের (জিএস) তথ্যমতে, চ্যাটজিপিটি-ফোর-এর প্রতিটি প্রশ্ন গুগলের একটি সাধারণ সার্চের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে।
ওয়াশিংটন পোস্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০ জন কর্মজীবীর মধ্যে একজন বছরে মাত্র একবার করে প্রতি সপ্তাহে জিপিটি-ফোর ব্যবহার করে (অর্থাৎ ১৭ মিলিয়ন মানুষ বছরে ৫২টি প্রশ্ন করে) তাহলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে তা ওয়াশিংটন ডিসি’র সব বাসাবাড়ি মিলিয়ে ২০ দিনে যতটা বিদ্যুৎ খরচ হয়, তার সমান।
সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এআরএম হোল্ডিংসের (এআরএম) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেনে হ্যাস সম্প্রতি সতর্ক করে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমেরিকার মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত দখল করে নিতে পারে। বর্তমানে এই হার মাত্র ৪ শতাংশ।
এআই-এর সঙ্গে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ শুধু বিদ্যুৎ নয় পানির খরচও বাড়াচ্ছে। কারণ এ কাজে ব্যবহৃত সার্ভারগুলো ঠাণ্ডা রাখতে ব্যবহার করা হয় পানি।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, রিভারসাইড-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জিপিটি-ফোর দিয়ে ১০০ শব্দের একটি উত্তর তৈরি করতে যত পানি লাগে, তা প্রায় তিন বোতল পানির সমান। এমনকি মাত্র তিন শব্দের উত্তর ‘ইউ আর ওয়েলকাম’ তৈরি করতেও প্রায় ১.৫ আউন্স পানি খরচ হয়।