পাওনা পরিশোধে দেরি, আগামী বছর সার সরবরাহে চুক্তি করবে না কাতারএনার্জি

ডলার সংকটের কারণে সময়মতো আমদানি বিল পরিশোধ না করায় আগামী বছর ইউরিয়া সার সরবরাহে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করবে না বলে জানিয়েছে কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ‘কাতারএনার্জি মার্কেটিং’।

chardike-ad

বিষয়টি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনকে (বিসিআইসি) জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

দেরিতে বিল পরিশোধের কারণে জি-টু-জি ভিত্তিতে বাংলাদেশে ইউরিয়া সরবরাহকারী অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিও সময়মতো সার সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করছে। কেউ কেউ বিলম্বের কারণে অতিরিক্ত সুদ আরোপ করছে বলেও অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বিসিআইসি এবং তাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান শিল্প মন্ত্রণালয়।

গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।

দেশের খাদ্য উৎপাদনের বড় অংশই নির্ভর করে বোরো মৌসুমের ওপর। এই সময়ে প্রায় ১২-১৩ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা থাকে। ডলার সংকটে আমদানি বিঘ্নিত হলে বোরোর আবাদ ব্যাহত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে—এই আশঙ্কা থেকে সার আমদানির এলসি খোলা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দ্রুত বিল পরিশোধ নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. নুরুজ্জামান গত ৩ এপ্রিল গণমাধ্যমকে বলেন, “সার আমদানির বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার কারণে কাতারএনার্জি আগামী বছর নতুন চুক্তি না করার কথা জানিয়েছে। আমরা তা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। অন্যান্য সরবরাহকারীদের উদ্বেগগুলোর কথাও তাদের জানানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জ সার কারখানা চালু আছে এবং বর্তমান মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে চলতি বোরো মওসুমে সারের সংকট হবে না। তবে এরপর সংকট দেখা দিতে পারে। সে কারণে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

বিসিআইসি সাধারণত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসব সার আমদানির এলসি খুলে থাকে।

সার আমদানির বিল পরিশোধে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, “রাষ্ট্রীয় আমদানির বিল পরিশোধে আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করত। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ছিল। এ কারণে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার দিচ্ছে না। ফলে বিপুল পরিমাণ ডলার জোগাড় করতে দেরি হচ্ছে, যা বিল পরিশোধে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।”

আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্ব

বিসিআইসির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জি-টু-জি চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের সাবিক থেকে ১৬টি লটে মোট ৪.৮০ লাখ টন, কাতারএনার্জি মার্কেটিং থেকে ৯টি লটে ২.৭০ লাখ টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব থেকে ৭টি লটে ২.১০ লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানি হচ্ছে।

সৌদি আরব থেকে আমদানিকৃত ১৫তম লটের সারের মূল্য বাবদ ১০.৩৫ মিলিয়ন ডলার ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি বলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে কাতারএনার্জি মার্কেটিং জানায়, কাতার থেকে সরবরাহকৃত ৬ষ্ঠ লটের বিল নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন দিন দেরিতে, ৭ম লটের বিল সাত দিন পরে এবং ৮ম লটের বিল ১৩ দিন পরে পরিশোধ করা হয়েছে।

‘বিলম্বে বিল পরিশোধের কারণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতারএনার্জি মার্কেটিং’—এমনটিই বলা হয়েছে চিঠিতে।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোবের ৩য় লটের সারের জাহাজ লোড পোর্টে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই লটের মূল্য বাবদ ১৪ মিলিয়ন ডলার চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। বিলম্ব হলে পরবর্তী লট আমদানিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং বিদেশি ব্যাংক বাড়তি সুদ আরোপ করতে পারে।

 

খবর: টিবিএস