রাজধানীতে বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩ ব্যাচের ছাত্র। তিনি শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এ ঘটনায় জাহিদুলের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এছাড়াও মামলায় ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। রবিবার (২০ এপ্রিল) মামলার বিষয়টি গণোমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত জাহিদুলের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী ছাড়াও আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও এই তালিকায় অজ্ঞাত আরও ২০/৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাহিদুল প্রাইম এশিয়ার গলিতে চা-সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য গিয়েছিল। ওই সময় সেখানে দুই জন মেয়েও ছিল। এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী এরাও ছিল।’
তার ভাষ্যে, ‘হঠাৎ করে ছেলেগুলো পারভেজকে বলতেছে তুমি এর দিকে কেন তাকিয়েছো। পরে আমার বন্ধু পারভেজ বললো যে ভাই আমরা এরদিকে তাকাই নি, একপর্যায়ে এটা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় তাদের মধ্যে। তখন স্যাররা তাদেরকে নিয়ে যায় মিটমাট করিয়ে দেয়। এই হলো ঘটনার সূত্রপাত।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার প্রধান তিনজন মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী বিষয়টি দিকে মোড় ঘোরায়। তারা হাজারীপাড়া এলাকার স্থানীয় কিছু টোকাই ছেলেদের নিয়ে আসে এবং জাহিদুলের ওপর হামলা চালায়।
এসময় জাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে দৌড়ে আসার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তারা তাকে ধারালো অস্ত্র আঘাত করে পালিয়ে যায় বলে জানান তারা।
থানা সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ নিহত হন।
টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছেন, জাহিদুলকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে হামলা করা হয়েছে। এসময় তার বুকে ছুরি মেরে তারা তাকে হত্যা করে।
বৈষম্যবিরোধীদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে একই বিভাগের ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন শিক্ষার্থী ছিল ঘটনার সময় তবে তারা হামলার সাথে জড়িত কি না সেটা আমাদের জানা নেই।’
এই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পেটে হাত রাখা অবস্থায় পারভেজকে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তার আশপাশে কয়েকজন উদ্বিগ্ন অবস্থায় তার সাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ ঘটনায় পরে জাহিদুলকে উদ্ধার করে সহপাঠীরা তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ দুপুর ১২টার তিবে জাহিদুল ইসলাম পারভেজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রদল ছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মী, ছাত্রদল সভাপতি, নিহতের ভাই ও প্রাইম এশিয়ার কয়েকজন শিক্ষক। জানাজার পর নিহতের ভাই কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সামনে। জানাজা শেষে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।