আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেসব কর্মকর্তাকে সচিব, সচিব পদমর্যাদার কিংবা বিভিন্ন সংস্থার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’।
সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত এই সংগঠনটি শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে। সংগঠনের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে যুগ্ম সচিব থাকাকালে তৎকালীন সরকার তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে। সেই অবস্থায়ই তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সরকার পরিবর্তনের পর তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “জনপ্রশাসনে যারা স্বৈরাচারী সরকারের দোসর বা দুর্নীতিপরায়ণ, তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে বঞ্চিত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা ফ্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগী, তাদের পদোন্নতি ও পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”
সাবেক এ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আমলারা এখনও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২৪তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলেও ব্যাচের ১৮৫ জন কর্মকর্তাকে রহস্যজনকভাবে বাদ রাখা হয়েছে। এছাড়া, জেলা প্রশাসক বা তৎকালীন মন্ত্রীদের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অন্তত ২২ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “জনপ্রশাসনে আওয়ামী আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের অপসারণ না করা গেলে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও পেশাদার আমলাতন্ত্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়।”
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বঞ্চিত কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, এবার তাদের প্রতি বৈষম্যের অবসান ঘটবে। কিন্তু সরকার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও, এর আট মাস পেরিয়ে গেলেও অনেকেই এখনো বঞ্চনার শিকার।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, “আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগীরা এখনো নানা কৌশলে পদোন্নতি-পদায়ন বাগিয়ে নিচ্ছেন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে উপদেষ্টাদের বিভ্রান্ত করছেন। কিছু উপদেষ্টা এসব পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের উপেক্ষা করে আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের পক্ষে ডিও লেটার দিচ্ছেন।”
সংগঠনটির পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, দাবি বাস্তবায়ন না হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।