সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে বিএনপি ‘ঐকমত্য কমিশনের’ সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে দফায় দফায় আলোচনা করছে।
বিএনপি ও ঐকমত্য কমিশনের চলমান বৈঠকে সংক্ষিপ্ত বিরতির সময় সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপরে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এগুলোর ওপরে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। সংবিধান সংস্কার দিয়ে শুরু করেছি, তারপর জুডিশিয়ারি হবে, এরপরে নির্বাচন ব্যবস্থা হবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই। আজকে যদি শেষ করতে না পারি, পরেও আলোচনা হবে।’
তিনি বলেন, আমরা বোঝাতে চাইছি—সংস্কার নিয়ে বিএনপি কতটা সিরিয়াস। সংবিধান সংস্কার নিয়ে আমাদের ১৩১টি প্রস্তাব রয়েছে। অথচ স্প্রেডশিটে আমরা পেয়েছি মাত্র ৭০টি দফা। আমরা প্রতিটি বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা করছি। সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকার—সবকিছুই আলোচনার আওতায় আসছে।
সংবিধান সংস্কারে ঐকমত্য গঠনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোটাদাগে সংবিধান সংস্কারের মৌলিক বিষয়ে তারা যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব একটা জায়গায় আসার জন্য। এখন পর্যন্ত ২৫টির মতো বিষয়ে আমরা একমত ও আংশিক একমত হয়েছি। বাকি অধিকাংশ বিষয়ে স্পেডশিটে আমরা একমত হতে পারিনি।
স্প্রেডশিট নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির অভিযোগ এনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘স্প্রেডশিটে বিভ্রান্ত সৃষ্টি ও মিসলিড করা হয়েছে। ১৩১ দফার মধ্য বিস্তারিত আলাপ আছে। কমিশনের মৌলিক প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে আলাপ করে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করা হবে। যে সংস্কারে জাতির কল্যাণ হয় সেটিই বিবেচনা করা হবে।’
বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুডিশিয়ারিতে অল্প বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করছি আমাদের অনেকটা মিসলিড করার মতো হয়েছে। বিস্তারিত মতামত দিতে গিয়ে দেখা গেছে, দেড়শর বেশি দফা ছিল যার মধ্যে আমরা ৮৯টি দফার বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি। যে সমস্ত বিষয়ে হ্যাঁ-না জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখলাম বিস্তর ফারাক। যেমন বলা আছে- আর্টিকেল ৯৫ সংশোধনী ব্যতিরেকে এখনই যদি বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়ার জন্য বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়, সেটার ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধানের অবস্থা বহাল রেখে বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ ও তার অধীনে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আইনটার মধ্যে লেখা আছে কাউন্সিল গঠন করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিএনপি চায় কিন্তু প্রক্রিয়া যেন সাংবিধানিকভাবে হয়। বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশের ক্ষমতাসহ সকল সংস্কার সাংবিধানিকভাবে হওয়া উচিত।’
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, যাই করা হোক না কেন, তা সংবিধানে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তা অসাংবিধানিক হিসেবেই গণ্য হবে। কারণ বিচার বিভাগকে অধ্যাদেশ জারির কোনো ক্ষমতা সংবিধানে দেওয়া হয়নি। তাই সবকিছুই সংবিধান ও আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকেই হওয়া উচিত। জুডিশিয়ারি নিয়ে এখন কঠিন বা বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া থেকেও বিরত থাকা উচিত।