'সাকিব আল হাসানের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, এটি ছিল বিশ্বাসঘাতকতা'

 

chardike-ad

সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্তটা কোনো অপরাধ নয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার বা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকার আছে। তার রাজনীতিতে যোগ দেয়া নয়, বরং তিনি কার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন, সেটাই মূখ্য বিষয়।

তিনি এমন একটা সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন যখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে—যার মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, গুম, রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর হয়রানিমূলক মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুঃশাসন ও দুর্নীতির পাহাড়, এমনকি ব্যাংক ডাকাতির মতো অভিযোগ। তখন সাকিবের এই দলে যোগদান নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটি শুধুই রাজনৈতিক অবস্থান নয়; বরং এক ধরনের মৌন সমর্থন এমন এক সরকারের প্রতি, যেটি আন্তর্জাতিক মহলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

একদলীয় শাসনে পরিচালিত কমিউনিস্ট দেশ ছাড়া, এমন কোনো শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদের কথা মনে পড়ে না, যিনি স্বেচ্ছায় এত বড় আকারের নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাকিব শুধু জনমতের অবস্থা ভুলভাবে বোঝেননি—তিনি তার সিদ্ধান্তের নৈতিক দায়ভারও উপেক্ষা করেছেন। এটি হয় গভীর রাজনৈতিক অজ্ঞতা, নতুবা আরও খারাপ কিছু—ব্যক্তিগত লাভের জন্য সুযোগসন্ধানী প্রবণতা।

আরও হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, তার আশেপাশে দক্ষ জনসংযোগ বা যোগাযোগ উপদেষ্টার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। সাকিবের মতো একজন আন্তর্জাতিক তারকার পক্ষে বিশ্বমানের স্পোর্টস ও ইমেজ ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সহায়তা নেওয়া কোনো কঠিন কাজ নয়। এমন পেশাদার পরামর্শকরা হয়তো তাকে এমন একটি সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখতে পারতেন, যা এখন তার ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা ও পেশাদার ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময়ে তিনি কোটি কোটি ডলার উপার্জন করেছেন—তাই দক্ষ পরামর্শ গ্রহণের মতো সুযোগ তার কাছে সহজলভ্যই ছিল।

কিন্তু যা সবচেয়ে বেশি ব্যথা দেয়, তা হলো তার নীরবতা—বিশেষ করে তার নিজ এলাকা মাগুরায় সংঘটিত সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। সেখানে তার দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অথচ সাকিব কিছু বলেননি—না কোনো নিন্দা, না কোনো বিচার দাবি, না কোনো দুঃখ প্রকাশ। তার এই নীরবতা শুধু হতাশাজনকই নয়—তা ছিল বিদারক।

হ্যাঁ, সাকিব হতে পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। কিন্তু প্রতিভা কিংবা জাতীয় দলের হয়ে খেলার গৌরব, কাউকে দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে না। এমন এক শাসকের পাশে দাঁড়িয়ে—যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিজেই ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর অভিযোগ এনেছে—সাকিব নিজের অজ্ঞতা দিয়ে নয়, বরং সক্রিয়ভাবে দমননীতির শরিক হয়ে উঠেছেন।

একদিন হয়তো সাকিব পড়বেন জাতিসংঘের ১২৭ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদন, যেখানে তার নির্বাচিত দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিশদ বিবরণ রয়েছে। এবং হয়তো তখন তিনি ভাববেন—এই সিদ্ধান্তটা শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য ছিল কি না, নাকি এটি ছিল ন্যায়বোধবর্জিত একটি পথচলা।

এই মুহূর্তে তার কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা একটাই—লোভ। তার রাজনৈতিক পদক্ষেপ, বিতর্কিত ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব, এবং কুখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা—সবই ইঙ্গিত দেয়, এটি ছিল ব্যক্তিস্বার্থে চালিত একটি উদ্যোগ; জনসেবার কোনো উদ্দেশ্য এতে ছিল না।

একদিন, হয়তো তাকে ফিরে আসতে হবে এবং নিজের সিদ্ধান্তের পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। তখন হয়তো তিনি স্বীকার করবেন—আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া শুধু একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং বিশ্বাসঘাতকতা।

 

খবর: টিবিএস