১৩ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত নেকড়ের ‘পুনর্জন্ম’ ঘটালেন বিজ্ঞানীরা

১৩ হাজারের বেশি সময় আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া ডায়ার উলফকে (বিলুপ্ত নেকড়ে) ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ ঘটনাকে বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

chardike-ad

মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর এক অর্জনে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডায়ার উলফকে পুনরায় জীবন্ত করে তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। টেক্সাসভিত্তিক জিন প্রকৌশল কোম্পানি কলোসাল বায়োসায়েন্স এ অবিশ্বাস্য সাফল্যের দাবি করেছে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রাচীন ডিএনএ, ক্লোনিং এবং জিন সম্পাদনার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সফলভাবে ৩টি ডায়ার উলফ শাবকের জন্ম দিয়েছেন।

এই ৩টি শাবকের মধ্যে দুটি পুরুষ— রোমুলাস ও রেমুস। এগুলোর ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্ম হয়েছে। এছাড়া একটি নারী শাবকের ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম হয়েছে। বর্তমানে এরা ছয় মাস বয়সী হলেও ইতোমধ্যে এদের উচ্চতা প্রায় চার ফুট এবং ওজন ৩৬ কেজি ছাড়িয়ে গেছে।

এই ডায়ার উলফদের জিনগতভাবে সবচেয়ে কাছাকাছি জীবিত আত্মীয় হলো গ্রে উলফ। তবে আকারে ডায়ার উলফ বড়, গাঢ় পশম এবং শক্তিশালী চোয়ালের অধিকারী। এরা একসময় উত্তর আমেরিকার শীর্ষ শিকারি ছিল।

কলোসালের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও হার্ভার্ড এবং এমআইটির জেনেটিক্স অধ্যাপক জর্জ চার্চ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই প্রকল্প আমাদের প্রযুক্তির সক্ষমতার প্রমাণ। এক ফোঁটা রক্ত থেকে ক্লোনিং করে প্রাণী ফিরিয়ে আনা এখন সম্ভব — এটা এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা।

বিলিয়নিয়ার এলন মাস্ক এই খবর শুনে নিজের ইচ্ছার তালিকায় লিখেছেন, ‘একটা ছোট পোষ্য উল-মামথ তৈরি করুন প্লিজ!’

জানা গেছে, শাবকদের আচরণ বিদ্যমান নেকড়েদের মতো নয়। টাইম ম্যাগাজিন জানায়, তারা মানুষের উপস্থিতিতে খুশি বা খেলাধুলার আচরণ করে না, বরং দূরে সরে যায়। এমনকি যে হ্যান্ডলার জন্মের পর থেকে তাদের লালন-পালন করছেন, তার কাছ থেকেও তারা দূরত্ব বজায় রাখে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি ডায়ার উলফদের ‘নিসঙ্গ স্বভাব’— তারা আদতেই একা থাকতে ভালোবাসে।

এই শাবকগুলো বর্তমানে একটি গোপন স্থানে দুহাজার একর এলাকায় ১০ ফুট উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা নিরাপদ পরিবেশে রাখা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় রয়েছে নিরাপত্তাকর্মী, ড্রোন এবং লাইভ ক্যামেরা মনিটরিং।

কলোসাল জানিয়েছে, ডায়ার উলফ ছাড়াও ম্যামথ, ডোডো পাখি এবং তাসমানিয়ান টাইগার পুনরুজ্জীবনের প্রকল্পেও তারা কাজ করছে।

কোম্পানির সিইও বেন ল্যাম বলেন, ১৩ হাজার বছরের পুরোনো একটি দাঁত এবং ৭২ হাজার বছর পুরোনো একটি খুলি থেকে আমরা সফলভাবে সুস্থ ডায়ার উলফ শাবকের জন্ম দিতে পেরেছি— এটি কেবল শুরু মাত্র।