ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী হত্যার ঘটনায় তাদের সেনারা ভুল করেছে। শনিবার (৫ এপ্রিল) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভুল স্বীকার করে তাদের বিবৃতি দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ওইদিন রাফাহ শহরের কাছে প্যালেস্টাইনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)-এর অ্যাম্বুলেন্স বহর, জাতিসংঘের একটি গাড়ি ও গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি ফায়ার ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা।
প্রথমে ইসরায়েল দাবি করে, গাড়িগুলো আলো বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই সন্দেহজনকভাবে রাতের অন্ধকারে এগিয়ে আসছিল। এছাড়া তাদের চলাচল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত ছিল না।
তবে নিহত এক প্যারামেডিকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলোর আলো চালু ছিল এবং তারা আহতদের সাহায্য করতে যাচ্ছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, নিহত ছয়জন প্যারামেডিক হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও তারা এ পর্যন্ত এর কোনও প্রমাণ দেয়নি। তারা স্বীকার করেছে, গুলি চালানোর সময় তারা কেউই অস্ত্রধারী ছিল না।
নিউইয়র্ক টাইমস শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলো রাস্তার পাশে থেমে আছে। আর ঠিক তখনই ভোরের আগে গুলিবর্ষণ শুরু হয়।
ভিডিওটি পাঁচ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলে, যেখানে প্যারামেডিক রেফাত রাদওয়ানকে শেষ প্রার্থনা করতে শোনা যায় এবং পরে ইসরায়েলি সেনাদের কণ্ঠ শোনা যায় যারা গাড়িগুলোর দিকে এগিয়ে আসছিল।
শনিবার সন্ধ্যায় এক আইডিএফ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, এর আগে সেনারা হামাসের তিন সদস্য থাকা একটি গাড়িতে গুলি চালিয়েছিল।
পরে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আকাশ থেকে নজরদারি চালানো বাহিনী জানায়, গাড়িগুলো ‘সন্দেহজনকভাবে এগিয়ে আসছে’।
অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাসের গাড়ির পাশে থামলে সেনারা নিজেদের হুমকির মুখে ভেবে গুলি চালায়। যদিও কোনও প্রমাণ ছিল না যে জরুরি দলটি অস্ত্রধারী ছিল।
ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, গাড়িগুলো ছিল চিহ্নিত এবং প্যারামেডিকরা প্রতিফলকযুক্ত পোশাক পরেছিল।
আইডিএফ জানায়, ১৫ জন নিহত কর্মীর মরদেহ বন্যপ্রাণীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বালিতে চাপা দেওয়া হয়েছিল এবং রাস্তাটি পরিষ্কার করতে পরদিন গাড়িগুলো সরিয়ে ও পুঁতে ফেলা হয়।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এলাকাটিতে নিরাপদ প্রবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় এবং ঘটনাস্থল শনাক্ত করতে না পারায় মরদেহগুলো এক সপ্তাহ পর উদ্ধার করা হয়। রেফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও খুঁজে পাওয়ার পর একটি সহায়তা দল মরদেহগুলো খুঁজে পায়। ওই মোবাইলে পুরো ঘটনার ভিডিও ছিল।
এই সপ্তাহের শুরুতে, একজন বেঁচে থাকা প্যারামেডিক বিবিসিকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলোর আলো চালু ছিল এবং তার সহকর্মীরা কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
আইডিএফ ‘ঘটনার পূর্ণ তদন্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং বলেছে, ঘটনার ধারাবাহিকতা ও এর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে।
রেড ক্রিসেন্টসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।